১১ বছরের শিশু সুমন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির একটি চা দোকানে কাজ করে। সারা দিন শত শত মানুষকে খাওয়ালেও পবিত্র মাহে রমজানের রোজা রাখছে নিজে।
ভাগ্যের নির্মমতায় শিক্ষা অর্জনের পরিবর্তনে চায়ের কাপ ধোয়ার কাজে ব্যস্ত শিশু সুমন। কাজের ফাঁকে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।
রোজার বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন বলে, ’আরে ভাই আমি তো সব সময়ই রোজা রাখি। কোনো দিন খাইয়া, কোনোদিন না খাইয়া। পেটের জ্বালা কী বুঝি না।’
প্রতিদিনের মত সুমন আজও রোজা রেখেছে। তবে, আজকের রোজাটি সেহরি না খেয়েই রেখেছে। কারণ তার খাবার জুটেনি। কিন্তু ইফতারটা ভালো করে করা প্রবল ইচ্ছে তার, সেজন্য বেশ কয়েকটি দোকানের ধোয়ামোছার কাজ করছে, যাতে ভালো টাকা পায়।
সুমন জানায়, সে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিত্যক্ত ভ্যানগাড়ির নিচে পলিথিনে তৈরি তার মায়ের ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে থাকে। বাবা ভৈরবে থাকেন। তাদের খোঁজ নিতে আসে না। মা-ই তাদের সংসার দেখে। কিন্তু মা এখন ভীষণ অসুস্থ। তাই কখনও ফুল বিক্রি করে বা চায়ের দোকানে কাজ করে সে। এ কাজে যে অর্থ মিলে তার সবটুকু মাকে দেয়।
সুমন বলে, বুঝ হওয়ার পর থেকেই মার সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেড়ে উঠেছে সে। এতদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাঁঠাল চাপা ফুল বিক্রি করে আসছে। এখন ফুল নেই। এজন্য দোকোন দোকানে কাজ করে।
গত কয়েকদিনে টিএসসির সামনে থাকা বেশ কয়েকটি দোকানে ধোয়ামোছার কাজে দিন কাটে সুমনের। এতে দিন শেষে বিনিময়ে পায় ১০টাকা করে। আজ দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ৫টি দোকানে ধোয়ামোছার কাজ করেছে। এতে ৫০ টাকা পাবে, সেটা মাকে দেবে এবং নিজেরা মজা করে ইফতার করবে।
সুমন জানায়, ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ে আসা অনেক শিক্ষর্থী তাকে বিভিন্ন সময় কাপড়-চোপড় দেয়। অবশ্য সেটা তার পরা হয় না। গ্রামে থাকা আরও একছোট বোন এবং দুই ভাইয়ের জন্য এ কাপড় পাঠিয়ে দেয় সে।
সুমনের মায়ের কী অসুখ হয়েছে- জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুমন বলে, ’শুধু কাশে। একদম চিকন হয়ে গেছে মা। অনেক বছর ধরে বাবা আয়ে না। আমি যদি বেশি টাকা পাইতাম, মাকে হাসপাতালে নিতাম, চিকিৎসা করতাম। মার জন্য মায়া হয়।’ এরপর কান্না শুরু করে।
পাশে থাকা এক ছাত্র, তার হাতে ১০০ টাকা দিতেই সুমন ফিরিয়ে দেয়। বলে, ’আমি ভিক্ষা করি না। কারো থেকে টাকাও নেই না। কাজ কইরা নিজে খাই মাকে দেই। আম্মা বলেছে, ভৈরবে আমাদের সম্পত্তি আছে। কিন্তু আমরা রোদ- বৃষ্টি-ঝড়ে সোহওয়ার্দীতে থাকি।’