আমি মেয়ে হয়ে কেন পারবো না। আমাদের দেশের সব মেয়েদের এই রকম তেজ থাকা দরকার।


একজন ছেলে যদি বাবা-মায়ের সংসারের হাল ধরতে পারে তাহলে আমি মেয়ে হয়ে কেন পারবো না। এই দায়িত্ব কি শুধুই ছেলেদের। মেয়েরাও তো একই বাবা-মায়ের সন্তান। সুযোগ থাক আর না থাক বাবা-মায়ের পাশে ছেলে-মেয়ে যাই হোক সব সন্তানকে দায়িত্ব নিয়ে ঝাপিয়ে পড়া উচিত বলে মনে করেন শারমিন। গতকাল রোববার শারমিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এভাবেই মনের কথা ব্যক্ত করছিলন তিনি।
আমি মেয়ে হয়ে কেন পারবো না।

ঘটনাটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুকুরিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম নতুন গাজীপুরের। জেলা শহর থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে ওই গ্রামের অটোরিকশা চালক এজাবুল হকের তিন মেয়ের মধ্যে বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এরপর তাদের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ বাবার চিকিৎসাসহ সংসারের হাল ধরতে বাবার সেই অটোরিকশার সিটে বসেছেন ছোট মেয়ে শারমিন।

লেখাপড়ার পাশাপাশি সারাদিন অটোরিকশা চালিয়ে যা আয় করেন শারমিন তা দিয়ে সংসারের খরচ চালান তিনি।

স্থানীয় ২২নং বাগবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে শারমিন পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর একটি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। অভাবের সংসারে তার লেখাপড়ার খরচ চালাতে না পেরে তাকে মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় তার মা। সেখান থেকেই ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন শারমিন।

শারমিনের বাবা এজাবুল হক জাগো নিউজকে জানান, এক সময় তিনি দিনমজুর ছিলেন। পরে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে রিকশাভ্যান কেনেন। কিন্তু, শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঠিকমত রিকশাভ্যান চালাতে পারতেন না। তাই সেটি বিক্রি করে এবং অন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আরো কিছু টাকা ঋণ নিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা দিয়ে একটি অটোরিকশা কেনেন তিনি। প্রতি মাসে ওই অটোরিকশা বাবদ তাকে ৫ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। কিন্ত শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিয়মিত অটোরিকশাও চালাতে পারেন না। এক সময় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। এসময় তার সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে বাবার পাশে এসে দাঁড়ায় ছোট মেয়ে শারমিন। লেখাপড়ার পাশাপাশি দেড় বছর থেকে বাবার অটোরিকশা চালাচ্ছে সে। বর্তমানে তার সংসারে কিছুটা হলেও স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

শারমিনের ইচ্ছা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করার। যদি সে এমন সুযোগ পায় তবে সেনাবাহিনীতে চাকরি করবে সে।
Previous Post
Next Post
Related Posts