ফ্রিলান্সারদের যে ১০টি অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

একজন অনলাইন ফ্রিলান্সার হিসেবে আপনি যাই কিছু করেন না কেন, এটাকে বর্তমানে একই সাথে সবথেকে স্বাধীন এবং সবথেকে সম্মানজনক পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়। ফ্রিলান্সার দের মাধ্যমে যে ধরনের কাজ করানো হয় তাতে সাধারনত ফ্রিলান্সার এবং ক্লায়েন্ট ২ জনেই লাভবান হন। যাক, আমার আজকের আলোচনার বিষয় এটা নয়। আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো এমন সব অভ্যাস যেগুলো একজন ফ্রিলান্সার -এর মাঝে থাকা উচিত। এই অভ্যাসগুলো না থাকার ফলে বিশেষত ৩য় বিশ্বের লোকজন ফ্রিলান্সার হিসেবে শুরু করে এবং অচিরেই পরাজিত হয় এবং তাদের আগের পেশা বেকারত্বে ফিরে আসে। চলুন দেখে নেই এই ১০ টি আলোচ্য অভ্যাস কি কি।

ফ্রিলান্সারদের প্রয়োজনীয় ১০টি  অভ্যাস

নিজেকে প্রচার করুন

আপনি যখন শুরু করলেন তখন আপনাকে কেউ চিনে না। আপনি আপনার পরিচিতি আপনার পাবলিক প্রোফাইলগুলোতে এমন কি আপনার ঘরের দরজায় লাগিয়ে রাখতে পারেন। কিন্তু এটা মনে করলে চলবে না যে অচিরেই কেউ আপনার দরজায় এসে কড়া নাড়বে। বরং, আপনাকে প্রতিনিয়ত নিজের প্রচার করতে হবে। এটা এমন একটা বিষয় যা বেশিরভাগ মানুষের জন্য বিরক্তিকর। কিন্তু এটাই হচ্ছে টিকে থাকার এবং এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম উপায়। এইজন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হল- বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ এবং অন্যান্য কমিউনিটিতে যুক্ত হন, এমন ইভেন্টে যান যেখানে আপনি আপনার উপযুক্ত ক্লায়েন্ট পাবেন, এরকম আরও অনেক কিছু।

প্রতিদিন লিখুন/ ডিজাইন করুন

আমি CPA Elite ফোরামে কোন এক গ্রাফিক ডিজাইনারের সাথে পরিচিত। সে CPA Elite এ যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পর এই ফোরামে তার পরিচিত সবাইকে অফার করেছে যে যার যার প্রয়োজন সে তাকে তাকে একটা করে ফ্রিতে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির লোগো ডিজাইন করে দিবে। যেই কথা সেই কাজ। আমার এক বড় ভাইও একটা কাজ করিয়ে ছিলেন। এবং আমি দেখলাম কাজটার মান যথেষ্ট ভালো। ভাবুন তো যাদের সে ফ্রি কাজ করে দিয়েছিল তাদের কখনো লোগো ডিজাইনার হায়ার করার দরকার হলে তার কথা কি একবার ভাববে না? সুতরাং বুজতেই পারছেন, আপনার হাতে কাজ না থাকলেও আপনি কাজ করুন। নিজের জন্য হলেও করুন । আর সবথেকে ভালো হয় তার মত কারো কারো ফ্রি কাজ করে দিন। এতে আপনার প্রচারের কাজও হয়ে যাবে।

সবসময় উপাস্থাপনা সুন্দর এবং স্বচ্ছ করুন

এই বিষয়টা সব ক্ষেত্রেই থাকা উচিত। ধরুন আপনার অফিসের বস আপনাকে একটা আনঅফিসিয়াল কাজ দিয়েছে। আপনি হয়তো ভাবছেন এটা আর গুছিয়ে করার কি আছে। কাজটা করে দিলেই তো  হল। তাই আপনি একটা ওয়ার্ড ফাইলে এলোমেলোভাবে কাজ করে দিয়ে দিলেন, কোন ফরমেটিং করলেন না, কোন মার্জিন দিলেন না। এইক্ষেত্রে আপনি হয়তো অনেক পরিশ্রম করে ভালোভাবেই কাজটা করেছিলেন। কিন্তু আপনার উপস্থাপনা থেকে মনে হবে আপনি কাজটা দায় সারা করেছেন। তাই কখনো উপাস্থাপনায় পাঞ্জলতার কথা ভুলে যাবেন না। মনে রাখবেন যাই করেন না কেন কাজটি পচন্দ করার জন্য কেউ যখন প্রথম চোখ বুলায় তখন প্রথম বিবেচ্য বিষয়ই হচ্ছে এটার বাহ্যিক অবয়ব।

একাধিক আয়ের উৎস নির্ধারণ

যখন আপনি নতুন কেউ আপনাকে চেনে না। সেই সময় আপনার আর তাদের মাঝে থাকে একটা ফ্রিলান্স মার্কেটপ্লেস (odesk.com, freelancer.com, elance.com). এখন আপনি কিছুদিন পর odesk এ বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেলেন। কিন্তু ইতোমধ্যে আপনার চাহিদার পরিবর্তন হয়ে গেছে। আপনি এখন ভাবলেন যে ডিজাইন করে তা এনভাটো তে বিক্রি করবেন। একটা কাজ করবেন আর সারা মাস ঘুমাবেন। তাই ভেবে আপনি যদি odesk ছেড়ে দেন তাহলে তা হবে মস্ত বড় বোকামি। কারন একটার পর একটা ডিজাইন জমা দিয়ে ৬ মাসে যখন আপনার একটাও ডিজাইন টিকবে না ঐদিকে তখন odesk এও আপনার জনপ্রিয়তা শেষ। তাই অন্য কিছু ভেবে আগেরটাকে বাদ দেওয়া যাবে না। একটা হাতে রেখেই আরেকটাতে হাত দিবেন।

স্বাধীনতার অসৎ ব্যাবহার করবেন না

আমরা সবাই জানি যে ফ্রিলান্স স্বাধীন পেশা। কিন্তু সেই সাধিনতার এতোটা ব্যাবহার করবেন না যে যাতে আপনার ক্যারিয়ার শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যায়। অনেকে আছেন যারা আওয়ারলি কাজের টুল চালিয়ে রেখে দিব্বি ভাতও খেয়ে নেন। মনে রাখবেন চোরের দশ দিন আর গ্রেহস্থের একদিন। এটা নিশ্চিত থাকেন যে এইধরনের অভ্যাস শুধরে না নিলে অচিরেই আপনিও শেষ সাথে আপনার ক্যারিয়ারও শেষ।

নিয়মানুবর্তী হতেই হবে

প্রত্যেক স্বাধীন পেশায় এই বিষয়টা খেয়াল রাখতে হয়। স্বাধীন পেশায়, কোন চাপ নেই তাই নিজের যখন যা খুশি তাই করে গেলে শেষে এসে দেখবেন কিছুই করা হয়ে উঠেনি। বিশেষ করে যারা কোন টেকনিক্যাল বা ক্রিয়েটিভ কাজ করেন তারা দৈনিক হাতে ধরে বেশ কিছুটা সময় নতুন জিনিস শিখবেন। নইলে স্রোতের সাথে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে।

সবসময় হাসিখুশি থাকুন

এই একটা বিষয় ফ্রিলান্সারদের কখনো বলতে হয় না। প্রায় সব ফ্রিলান্সাররাই ইতিবাচক এবং আশাবাদী হয়ে থাকেন। এবং চারপাশ সম্পর্কে তাদের অভিযোগ খুব কমই থাকে। আর তারা নিজের বেছে নেওয়া পেশাকে নিজের জন্য উপযুক্ত এবং মনের মত মনে করেন। তাই এই জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতিও তারা সবসময় কৃতজ্ঞ থাকেন। আর তাই জীবন সম্পর্কে যাদের অনেক অভিযোগ তাদেরকে বলে রাখি এটা ফ্রিলান্সারদের সাধারন অভ্যাসের মধ্যে অনুপস্থিত এবং তাদের এটা প্রয়োজনও হয় না। আপনার ক্লায়েন্ট, আশেপাশের মানুষ কার কাছ থেকে কি পাননি হিসাব বাদ দিন। যেহেতু আপনি ফ্রিলান্সার আপনি সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে এই মহামূল্যবান রত্ন পেয়েছেন তার হিসাব করুন।

নিয়মিত প্রকৃতির কাছে যান

ফ্রিলান্সাররা সাধারনত বেশিরভাগ সময় বাসায় বা অফিসে কম্পিউটার নিয়েই থাকেন যাতে তাদের অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই প্রতিদিন কিছুটা সময় রুটিন করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন, কিংবা বাড়ির পাশের পার্কে গিয়ে পাখিদের ডাক শুনে আসুন। দেখবেন মনটা অনেক সতেজ থাকবে। তাতে কাজ করার সময় কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং কাজের মান ভালো হবে।

জীবন থেকে কিছু বিষয় সরিয়ে দিন

আপনি হয়তো আগে খেলা দেখতেন, কিংবা বন্ধুদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা মারতেন, কিংবা অনেক বেশি বই পড়তেন। এর কোনটাই খারাপ না। তবে আপনার দায়িত্ব এখন অনেক বেড়ে যাবে। তাই আপনি আগের মত সবদিকে সময় দিতে গেলে বোকামি করবেন। আমি বলছিনা যে একেবারে ছেড়ে দিবেন। তবে বন্ধুদের সাথে আড্ডা কমিয়ে দিন, রাত জেগে বা সারা দিন বসে বসে টেস্ট ক্রিকেট দেখার কোন দরকার নেই। খুব বেশি ইচ্ছে হলে দু,একদিন দেখতে পারেন। তবে অভ্যাস করে দেখবেন না। এই ধরনের আরও অনেক ভালো বিষয় আছে যেগুলো থেকে সরে না আসলে আপনি প্রচুর কাজ করতে পারবেন না। তবে মাঝে মাঝে রুটিন বাদ দিয়ে চলাও খুব প্রয়োজনীয়।

যেকোনো কাজ সময় মত শেষ করুন

আগে হয়তো আপনি একদিনের কাজ তিনদিনে করতেন। কিন্তু ফ্রিলান্সার হিসেবে এই ধরনের ভাববেনও না। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতেই হবে। আজকের কাজ কালকের জন্য রেখে দিলে কালকের কাজ কখন করবেন? এর বাইরেও সময় বাঁচানোর চেষ্টা করুন। তবে কাজের কোয়ালিটি ঠিক রেখে।
একটি পোস্টে আর কতটুকু জানাতে পারি। তবে চেষ্টা করেছি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানাতে। কিছু ভুল হলে বা কোন বিষয় আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে কমেন্টে জানান। ধন্যবাদ।
Previous Post
Next Post
Related Posts