যেসব কারণে আপনি ক্রোম ব্যবহার না করে ফায়ারফক্স ব্যবহার করবেন!

যেসব কারণে আপনি ক্রোম ব্যবহার না করে ফায়ারফক্স ব্যবহার করবেন!
যেসব কারণে আপনি ক্রোম ব্যবহার না করে ফায়ারফক্স ব্যবহার করবেন!
কম্পিউটার ব্রাউজারের ক্ষেত্রে কোনটি সেরা? এটা যদি বলতে হয় – তাহলে উঠে আসবে দুটি নাম ক্রোম ও ফায়ারফক্স। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে উইন্ডোজ কম্পিউটারে ৪৭-৫৫% শতাংশ মানুষ কেবল গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করে। ঠিক দ্বিতীয় স্হানে রয়েছে মজিলা ফায়ারফক্স। ব্রাউজার দুটিই উইন্ডোজ মার্কেটে ইন্টারনেট ব্রাউজারের সিংহভাগ শেয়ার দখল করে আছে- আর ব্রাউজার দুটিই সম্পূর্ণ ওপেন-সোর্স। একসময় ক্রোমকে ইন্টারনেট ব্রাউজারের রাজা বলা হলেও, দিন দিন ফায়ারফক্স এর ব্যবহারকারী ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ২০১৬ সালে যেখানে ৭.৭ শতাংশ উইন্ডোজ ব্যবহারকারী ফায়ারফক্স ব্যবহার করত – এখন ২০১৭ সালে ফায়ারফক্স ব্যবহারকারী বেড়ে দাড়িয়েছে ১২% শতাংশে। ক্রমেই এই হার তুলনামূলকভাবেই বেড়েই যাচ্ছে।
তাই আজ আমরা আলোচনা করব এই দুটি ব্রাউজার নিয়ে; এবং কেন আপনি গুগল ক্রোম থেকে ফায়ারফক্সে সুইচ করবেন এই বিষয়াবলী নিয়ে।এখানে কোন ব্রাউজার এর বিরোধিতা করা হচ্ছে না। আপনি কেবল ক্রোম থেকে ফায়ারফক্সে আসলে – কি কি সুবিধা পেতে পারেন, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে যারা সাধারন কম্পিউটার ব্যবহারী রয়েছেন – তারা মূলত তাদের কম্পিউটারে কেবল একটি “নির্ভরযোগ্য ব্রাউজার”কে ব্যবহার করতেই সাচ্ছন্দ বোধ করেন।কেবল হাতে গোনা ডেভেলপার-ডিজাইনার রয়েছেন, যারা কাজের প্রয়োজনে একাধিক ব্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া আমরা সবাই সাধারনত কেবল একটি ব্রাউজারই ব্যবহার করি। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের অ্যানালাইটিকস ঘাটলে দেখা যায়,গরিষ্ঠভাগ ভিজিটর গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করে। এটা স্বাভাবিক – কেননা ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগলের সফটওয়্যারে নিঃসন্দেহে বিশ্বাস আছে সবার। তবে প্রশ্নটা হল, আমি কি ফায়ারফক্স ব্যবহার করে বেশি সুবিধা পাব-গুগল ক্রোম এর থেকে? উত্তরটি জানবেন এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে।
কেন বিগত দিনগুলো থেকে তুলনামূলকভাবে ফায়ারফক্স এর ব্যবহারকারী বেড়ে যাচ্ছে? আসলে ফায়ারফক্স কি তাহলে নিরাপত্তার জন্য আমারও ব্যবহার করা উচিত? গুগল ক্রোম কি আসলেই আমার সুবিধা করছে? আপনার এরকম মনে প্রশ্ন থাকতেই পারে। তবে খুশির সংবাদ এর উত্তর আছে!
ক্রোম এক্সটেনশন চলবে ফায়ারফক্সেঃ
ব্যাপারটা এমন যে এন্ড্রয়েড অ্যাপলিকেশন চলবে উইন্ডোজ ফোনে। যাই হোক,মজিলা ৪৮ এর রিলিজের মধ্য দিয়ে মজিলা কতৃপক্ষ ঘোষনা করেছে ,ফায়ারফক্স সাপোর্ট করবে WebExtensions। এটি হল একটি ক্রস-ব্রাউজার এপিআই। যেটা ডেভেলপারদের মাল্টিপল ব্রাউজার এর জন্য এক্সটেনশন,প্লাগিন তথা অ্যাডঅন তৈরি করার সুযোগ দেয়। তো WebExtensions এর মধ্য দিয়ে তৈরি ক্রোম এক্সটেনশন ব্যবহার করা যাবে মজিলা ফায়ারফক্সেও।
এই জন্য Chrome Store Foxified নামক একটি অ্যাডঅন ফায়ারফক্স ব্রাউজারে যোগ করে নিতে হবে। ফায়ারফক্সে WebExtensions সাপোর্ট এটি একটি চলমান বেটা প্রক্রিয়া, তাই একেবারে সব ক্রোম এক্সটেনশন নাও সাপোর্ট করতে পারে। তবে আশা করা যায় পুরোপুরিভাবে সব এক্সটেনশন সাপোর্ট করবে ফায়ারফক্স ৫৭ এর রিলিজের মধ্য দিয়ে।
ফায়ারফক্সের ইউনিক অ্যাডঅনঃ
যদিও এন্ড্রয়েড স্টোরে যেমন ভালো মন্দ অ্যাপের অভাব নেই ; মাশআল্লাহ ক্রোম স্টোরেও ; ক্রোম এক্সটেনশন এর অভাব নেই। গুগল ক্রোম ওয়েব স্টোরে তুলনামূলক ভাবে ফায়ারফক্স এর থেকে বেশি এক্সটেনশন আছে। তবে ফায়ারফক্সে এমন কিছু অ্যাডঅন তথা এক্সটেনশন আছে যা গুগল ক্রোমে নেই! আর এর ভেতর কতগুলো অ্যাডঅন এত এডিকটিভ যে, এগুলোর কারনে ফায়ারফক্সকে আপনি ছেড়ে যেতে চাইবেন না।
এক্ষেত্রে Three Style Tab নামক অ্যাডঅন এর কথা বলা যেতে পারে। এটি আপনার ব্রাউজারের ট্যাব বারকে সাইডবারে রুপান্তরিত করবে। তাছাড়াও DownThemAll,Tab Mix Plus এর মত আরও দারুন দারুন অ্যাডঅন রয়েছে।
ব্যাটারি সাশ্রয়ী হিসেবে ফায়ারফক্সঃ
এক্সটেনশন অ্যাডঅন এর কাহিনি গেল,এবার চলুন হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার কম্বিনেশন এর কথায় আশা যাক।বিশেষ করে যারা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে একটা বিষয়ে নজরে দেয়া খুব জরুরী সেটা হল ব্যাটারি এফিসিয়েন্সি। আপনার কম্পিউটার তথা ল্যাপটপে ইন্সটল হয়ে থাকা বিভিন্ন সফটওয়্যার এর ব্যাটারি চাহিদা বিভিন্ন রকম। তেমনি পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে একই সময়ে গড়ে যেখানে ১০০% এর ভেতর গুগল ক্রোম ব্যাটারি খরচ করবে ৭১% ঠিক সেখানেই ফায়ারফক্স খরচ করবে ৪৯%।এটা সত্য যে গুগল ক্রোম ফায়ারফক্স এর থেকে একটু ফাস্ট, তবে গুগল ক্রোম এই ফাস্টনেস এর জন্য আরো বেশি সিপিইউ ব্যবহার করে। আর নিঃসন্দেহে বেশি সিপিইউ ব্যবহার মানে বেশি পাওয়ার খরচ। এর কারনে ব্যাটারি ড্রেইন করার জন্য ফায়ারফক্স এর তুলনায় গুগল ক্রোম বেশি দায়ী।
বহু উইন্ডোজ ১০ কম্পিউটারে চালানো মাইক্রোসফট এর একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, গুগল ক্রোম এর থেকে মজিলা ফায়ারফক্স গড়ে ৩০-৩৫% কম ব্যাটারী খরচ করে। তো বন্ধুরা আপনি যদি ল্যাপটপ ইউজার হন ; এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন – আপনার ল্যাপটপ আরো কম চার্জ দিতে চাইলে গুগল ক্রোম আনইনস্টল করে ফায়ারফক্স ইনস্টল করতে পারেন।
ফায়ারফক্স কাস্টমাইজেশনঃ
ক্রোমে কাস্টমাইজেশন তথা থীম ব্যবহারের অপশন থাকলেও এটিকে সবসময় এর একটি আইডেন্টিকাল ডিজাইনেই দেখায়। আইকন গুলো পরিবর্তন করা যায়,টুলবারে অপশন যোগ বা বিয়োগ করা যায় ইত্যাদি। তবে ফায়ারফক্সে করা যায় আরও বেশি! এমনকি এখানে অন্য ব্রাউজারের রূপও আনতে পারা যাবে FXChrome,FXOpera, MX4 এর মত অ্যাডঅন ব্যবহার করে।
কাজের ক্ষমতার দিক দিয়ে একইঃ
যদি ইউজ এবিলিটি বা ব্যবহার্য ক্ষমতার কথা বলা হয়,তাহলে এই দুটি ব্রাউজারই এক্সিলেন্ট। তবে যদি গুরুত্ববাহী পার্থক্যের কথা বলা হয়, তাহলে ক্রোম বেশি পাওয়ার খরচ করে, যেখানে ফায়ার এর তুলনামূলক বেশ কম পাওয়ার সাশ্রয়ী। অন্যদিকে গুগল ক্রোম একটু ফাস্ট ফায়াফক্সের থেকে। তবে ফায়ারফক্স যে স্লো তা না।
ট্যাবস গুলোর জন্য Ram Usage:
ফায়ারফক্স এবং ক্রোম কোনটি ট্যাব এর জন্য কতটুকু জায়গা বা  Ram দখল করে রাখে? কেননা এটা এদের কার্যকরিতা ও ইউজার এফিসিয়েন্সি সম্পর্কে বোঝার সহজ উপায়।আমাদের ভেতর বেশিরভাগই নানা কাজে একাধিক-ততোধিক ট্যাব ওপেন করে রাখি, এরকারনেও সম্পূর্ণ কম্পিউটার স্লো হয়ে যায়, কেননা প্রতিটি ট্যাব মেমোরিতে তথা Ramএ জায়গা দখল করে ।এক্ষেত্রে ১ থেকে শুরু করে ৫ টি, ১০ টি এবং ১৫ টি ট্যাব চালু করে রাখার ক্ষেত্রে ক্রোম ও ফায়ারফক্স তুলনামূলক যে পরিমান মেমোরি ইউজ করে তা উল্লেখ করা হলঃ
ক্রোম [৫৮] ব্রাউজারটি ১ টি ট্যাব এর জন্য ৪৯.২ এমবি, ৫ টি ট্যাবের জন্য ২৬৫.৩ এমবি,১০ টি ট্যাবের জন্য ৫৩৩.২ এমবি,১৫ টি ট্যাবের জন্য ৭৪৮.৩ এমবি Ram দখল করে রাখে।
অন্যদিকে, ফায়ারফক্স [৫৩] ১ টি ট্যাবের জন্য ১১৬.৩ এমবি, ৫ টি ট্যাবের জন্য ৩৭৬.৬ এমবি,১০ টি ট্যাবের জন্য ৪৩৭.০ এমবি এবং ১৫ টি ট্যাবের জন্য ৫১৮.৪ এমবি Ram ব্যবহার করে। [সূত্রঃইন্টারনেট]
এখানে লক্ষ্যনীয় যে, ক্রোম ১-৫ টি ট্যাব এর জন্য ফায়ারফক্স এর তুলনায় ক্রোম কম Ram খরচ করে। তাই আপনি যদি বেশি ট্যাব খুলে রাখাতে অভ্যস্হ হন তাহলে ফায়ারফক্সে ট্রান্সফার হয়ে যেতে পারেন। আর কম ট্যাব খুলে রাখাতে অভ্যস্হ হলে ক্রোম আপনার জন্য ভালো।
প্রাইভেসিঃ
গুগল এক দিক দিয়ে একটি ডাটা কালেকশন কোম্পানি। তারা তাদের বিজ্ঞাপন ব্যবস্হা চালানোর জন্য নিয়মিত ব্যবহারকারীর সকল অনলাইন এক্টিভিটি নজরে রাখে। এটি তাদের অন্যতম বিজনেস স্কিম। তারা এই কাজের জন্য নিঃসন্দেহে ক্রোম থেকে অনেক ডাটা লাভ করে।
অন্যদিকে, ফায়ারফক্সে এরকম কোন ভয় নেই। তারা ব্যবহারীর  কোন অনলাইন কার্যবিধি দিকে নজর দেয় না এবং ট্র্যাকও করে না। এ দিক দিয়ে ফায়ারফক্সে আপনি নিরাপদ থাকতে পারেন। তো আপনি আপনার ব্রাউজিং হ্যাবিট সম্পর্কে গুগলকে যদি আর জানাতে না চান; তবে ফায়ারফক্সে সুইচ করতে পারেন।
গুগল তাদের ওয়েব ও অন্যান্য টেকনোলজি গুলো নিঃসন্দেহে তুলনামূলক ভালোভাবে ডিজাইন করবে তাদের ক্রোম ব্রাউজারের জন্য।যেমন,তাদের ক্রোমকাস্ট কেবল ক্রোম এর সাথে ব্যবহারযোগ্য। ফায়ারফক্স এর তুলনায় ক্রোম মোবাইল ডিভাইস এর জন্য বেশি জনপ্রিয়,সেজন্যই ক্রোম এর মার্কেট শেয়ার তুলনামূলক বেশি।সর্বপরি এডভান্সড ওয়েব ডেভেলমেন্ট অন্যান্য ব্রাউজারের তুলনায় ক্রোমে বেশি সুবিধাজনক।
ফায়ারফক্স এবং ক্রোম নিয়ে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি ব্রাউজার দুটি সম্পর্কে কিছুটা জানতে পেরেছেন। আপনি হয়ত ক্রোম থেকে ফায়ারফক্সে যেতে আগ্রহী হবেন, এটা এখন সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত।কোন ব্রাউজারকে এখানে অবহেলা করা হয়নি। ” আর আপনি যদি ক্রোম ও ফায়ারফক্স দুটিই অপছন্দ করেন তাহলে অপেরা ব্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন। ধন্যবাদ
Previous Post
Next Post
Related Posts