এই আর্টিকেলে ৫টি ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজার সম্পর্কে জানবো, যেগুলো গুগল ক্রোমের ফিচার বিদ্যমান থাকার সাথে সাথে আরো বেশি কিছু রয়েছে!
ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজার
যদি কথা বলি গুগল ক্রোম নিয়ে, এটি গুগলের ক্রোমিয়াম প্রোজেক্টের একটি প্রোগ্রাম, কিন্তু গুগল ক্রোম গুগল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তারা এতে প্রতিনিয়ত সব নতুন ফিচার যুক্ত করেই চলেছে। ক্রোমিয়াম একটি ওপেন সোর্স প্রোজেক্ট, যেটাকে কাজে লাগিয়ে যে কেউ আলাদা আলাদা ব্রাউজার তৈরি করতে পারে, সেখানে ইচ্ছা মতো নতুন ফিচার যুক্ত করাতে পারে। অপরদিকে গুগল ক্রোম হচ্ছে অফিশিয়াল গুগল ওয়েব ব্রাউজার, যেটাতে গুগল অনেক ফিচার যেমন- বিল্ডইন পিডিএফ রিডার, মিডিয়া কোডেক, স্বয়ংক্রিয় আপডেট ফিচার ইত্যাদি যুক্ত করে দিয়েছে। যেহেতু ক্রোম, ক্রোমিয়ামের উপর তৈরি তাই ক্রোমিয়ামের উপর তৈরি আরো আলাদা ব্রাউজারের সাথে ক্রোমের অনেক ফিচার মিলে যেতে পারে।
মডার্ন ওয়েব ব্রাউজার গুলোতে এক্সটেনশন সমর্থন করে, এর মানে ব্রাউজারের বিল্ডইন ফিচার ব্যাতিতও ইউজার যেকোনো এক্সটেনশন ইন্সটল করে নিজের ইচ্ছা মতো ফিচার পেতে পারে। বর্তমানে অনেক ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজার রয়েছে, যেগুলোতে অনেক সিকিউরিটি উন্নতি আনা হয়েছে এবং গোপনীয়তা রক্ষার খাতিরে গুগল সার্ভার লিঙ্ক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই আলাদা ব্রাউজার গুলো ক্রোমিয়ামের উপরই তৈরি কিন্তু এখানে আরো উপকারি এবং মজাদার অনেক ফিচার যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, যেমন- বিল্ডইন অ্যাড ব্লকার, বিল্ডইন ভিপিএন বা ডিএনএস ফিচার, বেটার টাব ডাউনলোড/বুকমার্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, আবার কোন কোন ব্রাউজারে ব্যবহৃত করা হয়েছে কুল থিম যেটা একই বিরক্তিকর লুক থেকে আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।
ক্রোমিয়াম বা বিলিঙ্ক ইঞ্জিন এর উপর তৈরি হওয়ার ফলে এই আলাদা ব্রাউজার গুলোতেও আপনি সরাসরি ক্রোম এক্সটেনশন মার্কেট থেকেই এক্সটেনশন ডাউনলোড এবং ইন্সটল করতে পাড়বেন। এর মানে ক্রোমের সকল এক্সটেনশন তো চালাতে পাড়ছেনই সাথে আলাদা আলাদা ব্রাউজার থেকে আলাদা আলাদা কুল ফিচার গুলোও পেয়ে যাবেন।
ভিভালডি (Vivaldi)
ভিভালডি একটি ফ্রীওয়্যার, এটি সম্পূর্ণ ক্রোমিয়াম প্রোজেক্টের উপর তৈরি। এই ক্রোস প্ল্যাটফর্ম ব্রাউজারটি ২০১৬ সালে প্রথম মার্কেটে সম্পূর্ণ ভার্সন রিলিজ করে, মানে আলাদা ব্রাউজার গুলো থেকে বয়সে এটি অনেক তরুণ ব্রাউজার। কিন্তু এর বয়সের কথা ভেবে এর ফিচারের যেন অবহেলা করবেন না, ক্রোমের মতোই এটি অনেক পাওয়ার ফুল এবং কুল লুকিং একটি ওয়েব ব্রাউজার। ব্রাউজারটির ইউজার ইন্টারফেসের উপর সরাসরি বেশ কিছু কাস্টমাইজেশন করতে পাড়বেন, এর থিম কালার পরিবর্তন করতে পাড়বেন এবং ব্রাউজারটি ওয়েব পেজের কালার অনুসারে ইউজার ইন্টারফেসের কালার থিম পরিবর্তন করতে পারে। এর সবচাইতে অসাধারন ফিচারটি হচ্ছে আপনি ট্যাব গ্রুপিং করতে পাড়বেন, সাথে আরো অনেক টাইপের ক্যাস্টম ফিচার তো থাকছেই। যেহেতু ব্রাউজারটি একেবারেই নতুন, তাই এখনো অনেক ফিচারের উপর কাজ করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে অবশ্যই আরো অনেক অসাধারণ ফিচার যুক্ত করা হতে পারে ব্রাউজারটিতে। আর এই অল্প সময়ের মধ্যেই ব্রাউজারটি বেশ জনপ্রিয়তা হাসিল করে নিয়েছে, আজকের অনেক টেক গীক আর অ্যাডভান্স ইউজারদের কাছে ভিভালডি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্রাউজার।
ব্রাউজারটি সত্যিই হাইলি কাস্টম যোগ্য একটি ব্রাউজার, এতে আপনি সহজেই স্পীড ডায়াল এবং স্টার্ট পেজ কাস্টম করতে পাড়বেন। কাস্টম থিম, কালার থিম, নাইট মুড ইত্যাদি ফিচার তো থাকছেই সাথে ব্রাউজারটি মাউস জেসচার সমর্থন করে। তাছাড়া ব্রাউজারটির মধ্যে বিল্ডইন সিএসএস ডিবাগার ফিচার রয়েছে, আর এর গুরুত্ব ওয়েব ডেভেলপার’রা ভালো করেই জানেন।
ইয়ানডেক্স হলো রাশিয়ান ইন্টারনেট কোম্পানি, যাদের সার্চ ইঞ্জিন পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম। তাদের অফিশিয়াল ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজারটি দেখতে স্ট্যান্ডার্ড ব্রাউজারদের মতো না লাগলেও এতে যথেষ্ট ক্রোমিয়াম ফিল পেতে পাড়বেন। ২০১২ সালে ইয়ানডেক্স ব্রাউজার প্রথম মার্কেটে আসে, আর বর্তমানে এর ক্রোস প্ল্যাটফর্ম আর অনেক কুল ফিচার সহজেই অনেক ইউজারের মন কেড়ে নিয়েছে। উইন্ডোজ, ম্যাক, অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, লিনাক্স সকল প্ল্যাটফর্মের জন্যই এই ব্রাউজার প্রাপ্য। এই ব্রাউজারটির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বা বলতে পারেন ইউনিক ফিচারটি হচ্ছে ডিএনএস ক্রিপ্ট (DNSCrypt) — এর মানে এই ডিএনএস সার্ভার থেকে ডাটা সেন্ড বা রিসিভ করার সময় রিকোয়েস্ট গুলোকে এনক্রিপটেড করিয়ে তারপরে সেন্ড বা রিসিভ করে।
এই ব্রাউজারে নিউ ট্যাব বা স্টার্ট পেজকে ট্যাব্লেউ (Tableau) বলা হয়, এখানেও মাউস জেসচার রয়েছে কিন্তু ভিভালডির মতো আপনি একে কাস্টম করতে পাড়বেন না। সাথেও এটি ওয়েব সাইটের থিম এবং কালার অনুসারে নিজের থিম কালার পরিবর্তন করে। ওপেরা ব্রাউজারের মতো এতে টার্বো মুড রয়েছে, যেটা স্লো ইন্টারনেট কানেকশনে কমপ্রেশন ম্যাথড ইউজ করে ব্রাউজিং বা ভিডিও স্ট্রিমিং ফাস্ট করার চেষ্টা করে। সাথে আপনি যে ফাইলই ডাউনলোড করবেন, সেটা ক্যাস্পারস্কি অ্যান্টিভাইরাস দ্বারা স্ক্যান হয়ে ডাউনলোড হবে।
টেকহাবস আপনি নিয়মিত অনুসরণ করে থাকলে এই ব্যাপারটি অবশ্যই জানেন যে, আমি সিকিউরিটি আর প্রাইভেসির কতো বিশাল ফ্যান। যদিও এই ৩ নং পজিশনে অপেরা ব্রাউজারকে রাখলে ভুল হতো না, কিন্তু আলাদা বিল্ডইন প্রাইভেসি ফিচার যুক্ত থাকার জন্য আমি এপিক প্রাইভেসি ব্রাউজারকে আজকের লিস্টে ৩ নং এ রাখলাম। এটি ইন্ডিয়ার তৈরি প্রথম ওয়েব ব্রাউজার, যেটাতে একসাথে কতিপয় ইউজেট প্রি-ইন্সটল রয়েছে। এপিক ব্রাউজারটি বর্তমানে ম্যাক এবং পিসির জন্য, তবে আশা করা যায় সামনে হয়তো আরো অপারেটিং সিস্টেম সমর্থন করবে। ব্রাউজারটির ইন্টারফেস কিন্তু হুবহু গুগল ক্রোমের মতো, তবে ক্রোম ভেবে যেন ভুল করবেন না।
ডাউনলোড এপিক প্রাইভেসি ব্রাউজার
অপেরা (Opera)
আমার প্রথম ইন্টারনেট ব্রাউজিং অপেরার হাত ধরেই হয়ে এসেছে, ২০০৭ সাল থেকে পিসিতে আর ২০০৯ সাল থেকে মোবাইলে অপেরা ব্যবহার করে আসছিলাম, তবে আমি এখন পার্সোনালভাবে অপেরা তেমন ব্যবহার না করলেও আমার কাছে সকল উপকারি ফিচারে প্যাকড বা জেটপ্যাক ব্রাউজার হচ্ছে এই অপেরা। ব্রাউজারটি ২০ বছরের বেশি পুরাতন আর পূর্বে এটি প্রেস্টো ইঞ্জিনের উপর কাজ করতো, যেটা পরিবর্তন করে ২০১৩ সালে বিলিঙ্ক ক্রোমিয়াম নির্ভর ইঞ্জিনের উপর অপেরাকে নতুন করে ডেভেলপ করা হয়। ওপেরাতে সত্যিই কিছু উপকারি আর বেস্ট ফিচার যুক্ত করা রয়েছে, ফলে একে সহজেই আপনার কম্পিউটারের জন্য অল-ইন-ওয়ান ব্রাউজার বললে ভুল হয়না।
সাথে আরো কিছু হাইলাইটেড ফিচার যেমন- বিল্ডইন অ্যাড ব্লকার, ব্যাটারি সেভার মুড, টারবো পেজ লোডিং ফিচার, যেকোনো ওয়েব ভিডিও অপআউট করে ডেক্সটপ প্লেয়ারের মতো দেখতে পাড়বেন, এবং আরো বহু কাস্টম ফিচার রয়েছে, তাই আগ্রহী থাকলে আর কথা না বাড়িয়ে এক্ষুনি ইন্সটল করে দেখতে পারেন।
ডাউনলোড অপেরা ব্রাউজার
ইউসি ব্রাউজার (UC Browser)
মোবাইল প্ল্যাটফর্মে ইউসি ব্রাউজার সবচাইতে জনপ্রিয় একটি ব্রাউজার, আর ২০১৫ সাল থেকে আর ডেক্সটপ ভার্সনও রয়েছে। যতো ক্রোমিয়াম ব্রাউজার রয়েছে, তাদের তুলনায় এই ব্রাউজার দেখতে একটু ভিন্ন রকমের সাথে অনেক থিম ব্যবহার করতে পাড়বেন। অনেক থিম থাকলেও আমার কাছে ডিফল্ট থিমটিই বেস্ট বলে মনে হয়েছে। ব্রাউজারটিতে বেস্ট ফিচার হচ্ছে, এতে পোর্টেবল হটস্পট তৈরি করার সুবিধা রয়েছে, যদিও উইন্ডোজ ১০ এ ডিফল্টভাবেই ল্যাপটপ বা পিসি থেকে নেট শেয়ার করে ওয়াইফাই হটস্পট বানানো যায়, কিন্তু উইন্ডোজ ৭ বা ৮.১ এ ইউসি ব্রাউজারের এই সুবিধাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
এছাড়াও এই ব্রাউজারে অনেক উপকারি টুল রয়েছে, তবে আপনি যদি মোবাইল ভার্সন ইউসি চালিয়ে থাকেন, অবশ্যই জানেন এই ব্রাউজারের ডাউনলোড ফিচারটি অনেক পাওয়ারফুল, আর পিসির ক্ষেত্রেও সেটা সমান পাওয়ারফুল রেখেছে ইউসি ব্রাউজার, সত্যিই অনেক দ্রুত যেকোনো ফাইল ডাউনলোড করার ক্ষমতা রাখে এই ব্রাউজারটি। এতে ডিফল্ট স্ক্রীনশট টুল রয়েছে, যেটা অনেকের কাছেই উপকারি একটি ফিচার। ব্রাইটনেস অ্যাডজাস্টমেন্ট, নাইট মুড, লিঙ্ক প্রি-লোডিং, নেক্সট পেজ প্রি-লোডিং ইত্যাদি আরো অসংখ্য ফিচার রয়েছে এই ব্রাউজারটিতে। তাই অবশ্যই চেক করে দেখতে পারেন, তবে ইউসি ব্রাউজার ব্যবহার করার পূর্বে, উপরের লিস্টে থাকা ব্রাউজার গুলো আগে চেক করে দেখা প্রয়োজনীয়।
ডাউনলোড ইউসি ব্রাউজার
আরো অনেক ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজার রয়েছে, যাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু ইউনিক ফিচার রয়েছে, তবে প্রত্যেক ব্রাউজারকে একটি সিঙ্গেল আর্টিকেলে যুক্ত করা সম্ভব নয়, ভবিষ্যতে আরো কিছু ক্রোমিয়াম ব্রাউজার নিয়ে আলোচনা করা যাবে, তবে এই লিস্টে বেস্ট কিছু ব্রাউজার নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন, এর মধ্যে কোন ব্রাউজারটি আপনি ব্যবহার করতে চলেছেন।
post by: techubs.net/article/6481