চার্জার টাইপ
আজকের দিনে শুধু স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট নয়, অনেক পোর্টেবল ডিভাইজ ব্যবহার করতে হয়, এবং প্রত্যেকটি ডিভাইজকে চার্জ করার প্রয়োজন থাকে। এখন আপনি যদি একাধিক ডিভাইজ ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে একাধিক চার্জার বহন করা খুবই ঝামেলার কাজ হতে পারে। আর সকল ডিভাইজের চার্জার টাইপও কিন্তু এক রকমের হয় না। হতে পারে আপনার স্মার্টফোন আর ট্যাবলেট উভয়তেই মাইক্রো ইউএসবি চার্জার পোর্ট সাপোর্ট করে, তাহলেই কি সবকিছু মিল হয়ে গেলো?
আবার যদি কথা বলি, ল্যাপটপ চার্জার নিয়ে, অবশ্যই দেখে থাকবেন ল্যাপটপের জন্য কোন স্ট্যান্ডার্ড চার্জার নেই। একেক ল্যাপটপ তাদের একেক টাইপের চার্জার এবং পিন ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে স্মার্টফোন চার্জার দিয়ে ল্যাপটপ চার্জ করার চিন্তা সম্পূর্ণই বৃথা। তবে বর্তমানের ল্যাপটপ গুলোতে ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট দেখা যাচ্ছে, এতে ল্যাপটপ চার্জার গুলো হয়তো ভবিষ্যতে ইউনিভার্সাল হয়ে উঠবে। অ্যাপেল ডিভাইজ গুলো ব্যবহার করলে আরেক সমস্যা, সেখানে লাইটনিং পোর্ট ব্যবহার করা হয়, শুধু অ্যাপেলই এই টাইপ কানেক্টর ব্যবহার করে, তবে আইফোন আর আইপ্যাড একসাথে ব্যবহার করলে একই চার্জার টাইপ দেখেতে পাবেন।
এবার কথা বলি, মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট নিয়ে, বর্তমানে এটি সবচাইতে ইউনিভার্সাল। বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ফোন, উইন্ডোজ ফোন, ব্ল্যাকবেরি ফোন, স্মার্ট ওয়াচ ইত্যাদি সহ অনেক পোর্টেবল ডিভাইজে মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট ব্যবহার করা হয়। যাই হোক, অ্যাপেল লাইটনিং টু মাইক্রো ইউএসবি অ্যাডাপটার অফার করে থাকে। যদি কথা বলি ইউএসবি টাইপ-সি নিয়ে, এটি নতুন কানেক্টর টাইপ এবং হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে ইউনিভার্সাল হয়ে উঠবে। এই টাইপের কানেক্টর স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ল্যাপটপ গুলোতেও ব্যবহার হতে দেখা যাচ্ছে, কেনোনা ইউএসবি টাইপ-সি অনেক বেশি পাওয়ার হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রাখে। ল্যাপটপে মাইক্রো ইউএসবি কানেক্টর থাকে না, কেনোনা এটি ল্যাপটপকে যথেষ্ট পাওয়া সরবরাহ করতে সক্ষম নয়।
ভোল্টেজ এবং অ্যাম্পারেজ
চার্জার কানেক্টরের ঝামেলা মেটার পরে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ টার্মটি হচ্ছে ভোল্টেজ এবং অ্যাম্পারেজ। দেখুন, যতো মাইক্রো ইউএসবি চার্জার রয়েছে সবগুলোই ৫ ভোল্টের হয়ে থাকে, এর মানে ভোল্টেজ নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। বাজারে দুই টাইপের চার্জার সবচাইতে বেশি দেখা যায়, ৫ ভোল্ট এবং ১ অ্যাম্পারেজ ও ৫ ভোল্ট এবং ২.১ অ্যাম্পারেজ। ভোল্টেজ হলো কোন পাইপে প্রবাহিত হওয়া পানির প্রেসার আর অ্যাম্পারেজ হলো পাইপের মধ্যদিয়ে কতোটা পানি বহমান হবে তার পরিমাপ, আপনি অ্যাম্পারেজকে কোন নদীর পানির স্পীডের সাথেও তুলনা করতে পারেন। যদি আপনি ডিভাইজে বেশি ভোল্টেজের চার্জার ব্যবহার করেন, তবে এতে ডিভাইজের সার্কিট ড্যামেজ হয়ে যাবে, কেনোনা বেশি এনার্জি লোড নেবার ক্ষমতা ঐ ডিভাইজটিতে নেই। তবে মাইক্রো ইউএসবি চার্জারের ক্ষেত্রে বেশি ভোল্টেজ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না, কেনোনা সকল চার্জার ৫ ভোল্টের উপরই হয়ে থাকে, এমনকি আপনি যদি ল্যাপটপ থেকেও চার্জ করেন, সেখানেও ৫ ভোল্টই সরবরাহ বলে ইউসবি ক্যাবলে।
কিন্তু প্রশ্ন আসে, অ্যাম্পারেজের ক্ষেত্রে, কেনোনা বিভিন্ন চার্জার আলাদা আলাদা অ্যাম্পারেজে রেটিং থাকতে পারে। আপনার এক ফোনের চার্জারে ১ অ্যাম্পারেজ রেটিং থাকতে পারে, সাথে ট্যাবলেট চার্জার ২.১ অ্যাম্পারেজ রেটিং করা থাকতে পারে, তো এক্ষেত্রে কি ট্যাবলেট চার্জার স্মার্টফোনে ব্যবহার করা ঠিক হবে? দেখুন, অ্যাম্পারেজের ফলে আপনার ফোনটি ব্লাস্ট হয়ে যাবে না। আজকের বেশিরভাগ মডার্ন ফোন অনেক দ্রুত চার্জ হতে পারে, এর মানে ফোনে বেশি অ্যাম্পারেজ সাপোর্ট করার ক্ষমতা থাকে। আপনি ২.১ অ্যাম্পারেজ রেটিং করা ফোনে যদি ১ অ্যাম্পারেজ চার্জার ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে কিছুই হবে না, তবে চার্জিং হতে দেরি লেগে যাবে। আবার ১ অ্যাম্পারেজ রেটিং করা ফোনে ২.১ অ্যাম্পারেজ ব্যবহার করলেও সমস্যা হবে না, বরং চার্জিং টাইম একটু ফাস্ট হয়ে যাবে। বেশি অ্যাম্পারেজ চার্জার ব্যবহার করলেও আপনার ফোনে সমস্যা হবে না, কেনোনা ফোন ব্যাটারি সার্কিটে আগে থেকেই অ্যাম্পারেজ ম্যানেজ করার ক্ষমতা দেওয়া থাকে। আবার আপনি যদি হাই কোয়ালিটি চার্জার কিনে থাকেন, সেক্ষেত্রে চার্জার নিজেও অনেক স্মার্ট হবে, সে পরিমান মতোই ডিভাইজকে চার্জ সরবরাহ করবে। আপনার চার্জার যদি ১ অ্যাম্পারেজ রেটিং হয়, তো আজকের দিনে এটিকে স্লো চার্জার বলা হবে, কেনোনা আজকের স্মার্টফোন গুলো অনেক দ্রুত চার্জ হতে পারে সাথে বেশি অ্যাম্পারেজ হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রাখে।
বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করার জন্য কুইক চার্জিং টেকনোলজির উদাহরণ নেওয়া যেতে পারে। আজকের অনেক মডার্ন ডিভাইজ কুইক চার্জিং সাপোর্ট করে, কিন্তু কুইক চার্জিং ঠিক তখনোই করতে পাড়বেন, যখন আপনার ডিভাইজ এবং চার্জার উভয়েই সেটা সমর্থন করবে। আবার কুইক চার্জিং টেকনোলজি কিন্তু আলাদা হতে পারে, যদি ডিভাইজের টেকনোলজির সাথে চার্জার কুইক চার্জিং টেকনোলজি ম্যাচ না করে, তাহলে কিন্তু কুইক চার্জ হবে না, কিন্তু এর মানে এটা নয় কোন চার্জই হবে না, চার্জ হবে তবে স্লো চার্জ। আপনি কুইক চার্জিং সাপোর্ট করেনা এমন ডিভাইজে কুইক চার্জার লাগালে সেখানে চার্জ হবে, কিন্তু রেগুলার স্পীডে, তাহলে কি দাঁড়ালো? — অবশ্যই আপনার ফোনে বেশি অ্যাম্পারেজ ব্যবহার করতে পাড়বেন, তবে ভোল্টেজ বেশি হলে সার্কিট ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।
তাহলে কি যেকোনো চার্জার ব্যবহার করা যাবে?
ওয়েল, আমি উপরের প্যারাগ্রাফ গুলোতে বিষয়টি পরিষ্কারই করে দিয়েছি। হ্যাঁ, বেশিরভাগ সময়ই আপনি ব্যবহার করতে পাড়বেন। তবে আপনার ডিভাইজের আসল চার্জার যদি ২.১ অ্যাম্পারেজের হয়ে থাকে আর আপনি যদি ১ অ্যাম্পারেজ আলাদা চার্জার ব্যবহার করে চার্জ করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার চার্জিং স্পীড স্লো হয়ে যাবে। আবার আপনার ডিভাজের আসল চার্জার ১ অ্যাম্পারেজ, এর মানে কিন্তু এই নয় এটি বেশি অ্যাম্পারেজ চার্জার সমর্থন করতে পাড়বে না।
ইউএসবি টাইপ-সির ক্ষেত্রে বিষয়টি অনেক সহজ, আপনি একই চার্জার ব্যবহার করে ইউএসবি টাইপ-সি সাপোর্ট করা সকল ডিভাইজ চার্জ করতে পাড়বেন, এতে সমস্যা হবে না, হোক সেটা ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, বা ট্যাবলেট। ভালো মানের চার্জার ব্যবহার করলে, চার্জার এবং স্মার্টফোন ব্যাটারি নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিতে পারে, এতে ব্যাটারির যেরকম চার্জ দরকার, চার্জার সেটা সরবরাহ করতে পারে। তাই অবশ্যই কমদামী চার্জার পরিত্যাগ করায় বেটার।
আমি নিজেও এক চার্জার ব্যবহার করে আমার দুইটি আলাদা ব্যান্ডের স্মার্টফোন এবং উইন্ডোজ ফোন চার্জ করি। আমার উইন্ডোজ ফোনের আসল চার্জার ১ অ্যাম্পারেজে রেটিং করা কিন্তু আমি ২.১ অ্যাম্পারেজ চার্জার ব্যবহার করে চার্জ করছি ১ বছর যাবত, এতে কোনই সমস্যা লক্ষ্য করতে পারি নি, বরং একটু চার্জ দ্রুতই হয় এখন। আশা করছি, আর্টিকেলটি থেকে সকল প্রশ্ন গুলোর সঠিক উত্তর পেয়ে গেছেন।
পোস্ট ক্রেডিটঃ By techubs.net