ওয়েব ৩.০ ইন্টারনেটের নয়া জামানা সম্পর্কে আমাদের যা জানা প্রয়োজন!

শুরুর আলাপ

টেক দুনিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে নানারকম কানাঘুষা শোনা যায়, আমাদের সুপরিচিত ইন্টারনেট নাকি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। পুরানো চেহারা পাল্টে নতুনরূপে তার আবির্ভাব ঘটার আগমনী বার্তা শোনা যাচ্ছে চারপাশে। নতুন এই ইন্টারনেটকে বলা হচ্ছে ওয়েব ৩.০। কিন্তু খুব কম মানুষই জানেন আদতে কী কী পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে সামনের দিনগুলোয় আর তা কিভাবে বদলে দেবে আজকের ইন্টারনেট ইন্ডাস্ট্রিকে। রোর বাংলার পাঠকদের সে বিষয়ে জানিয়ে রাখতেই এই আয়োজন।

ওয়েব ৩.০ সম্পর্কে জানার আগে আমাদের ভালোভাবে জানা প্রয়োজন এর পূর্বতন দুটি ভার্সন সম্পর্কে। তাই আগে আমরা ওয়েব ১.০ এবং ওয়েব ২.০ সম্পর্কে জেনে নেবো সংক্ষেপে।

ওয়েব ১.০

কতিপয় স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট নিয়ে গড়ে উঠেছিলো প্রথম যুগের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব। একটি সাইট তখন হাজার রকমের তথ্য দিয়ে বোঝাই ছিলো, ছিলো না কোনো ব্যবহারকারীর সাথে ইন্টার‌্যাক্ট করতে পারে এমন কোনো কন্টেন্ট। সেসময় ইন্টারনেটের সাথে কানেক্ট করাও ছিলো বিশাল ঝক্কির ব্যাপার। বারে বারে মডেম দিয়ে ডায়াল করা বা টেলিফোন ক্যাবল ব্যবহার করে বাসার অন্য সবাইকে টেলিফোন ব্যবহার করতে না দেয়া ছিলো খুবই পরিচিত দৃশ্য। যারা অনেক পুরোনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, তাদের হয়তো ঘটনাগুলোর ফ্ল্যাশব্যাক হয়ে গেলো একে একে।

ইন্টারনেট বোঝাতে অনেকেই তখন বুঝতেন এওএল চ্যাট রুম বা এমএসএন ম্যাসেঞ্জার, আস্ক জিভস বা আলতা ভিসতা। আর ইন্টানেটের গতি যেন ছিলো দুঃস্বপ্নের মতো। এখনকার সময়ে ভিডিও এবং মিউজিক স্ট্রিম করা যেমনটি পানি-ভাত হয়ে গিয়েছে, তখনকার দিনে তা কল্পনাই করা যেত না। ভাগ্য ভালো থাকলে, একটি গান ডাউনলোড হতে সময় নিতো পুরো একটি দিন!

তারপর এলো ওয়েব ২.০

বিপ বিপ করতে থাকা মডেম আর ঘুম ধরানো ওয়েবসাইট ইন্টারফেসের হাত থেকে মুক্তি মিললো তখন। এপার থেকে শুধুমাত্র চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়াও ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারছেন। ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি পেলো, হরেক রকম ইন্টারেক্টিভ কন্টেন্টে ভরে উঠলো ইন্টারনেট। সর্বোতভাবে তথ্য আদান প্রদানের যে সংস্কৃতি, তা গড়ে উঠলো ফেসবুক, ইউটিউব, উইকিপিডিয়া, ফ্লিকার, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে। অর্থাৎ বর্তমান সময়ের এই ইন্টারনেটই হলো ওয়েব ২.০।

ওয়েব ২.০-র এই যুগটি নিঃসন্দেহে অনেক কাজ সহজ করে দিয়েছে আমাদের। তথ্য আদান প্রদান করার ক্ষেত্রেপড়ো-লেখো-শেয়ার করো-র এই ওয়েবটি তো সবকিছু চলছে ঠিকঠাকই, অন্তত সাদাচোখে তো তাই দেখছি আমরা। তবে নতুন করে কি হলো? কেনই বা আসছে ওয়েব ৩.০?
তথ্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

জাতিসংঘের এক হিসাব মতে, ২০০০ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিলো মাত্র সাতশো আটত্রিশ মিলিয়ন। ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন দশমিক দুই বিলিয়ন। অর্থাৎ, মাত্র পনের বছরের ব্যবধানে এখন পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত, যেখানে ২০০০ সালে মোট জনসংখ্যার আটভাগের একভাগ মানুষও ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন না।

এখন এতসব মানুষের হাজার রকম তথ্য, তাদের পরিচয়, শেয়ার করা বিভিন্ন লেখা, ছবি বা ভিডিও ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে আগামী বিশ্বে, টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো তা বুঝে নিয়েছে আগেভাগেই। মানুষ জানুক কিংবা না জানুক, গুগল, আমাজন, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহারকারীদের সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য, যেমন তাদের পরিচয়, অবস্থান, ইন্টারনেট ব্রাউজ করার ধরণ, সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের ধরণ, অনলাইন শপিং ইত্যাদি বিক্রি করে থাকে। বিভিন্ন সেবা পেতে ব্যবহারকারীরাও নিরাপত্তার প্রশ্নে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে মাথা ঘামাচ্ছেন না।

ওয়েব ৩.০: শুরুর যাত্রা

আমাদের দৃশ্যমান ইন্টারনেটের দুনিয়ার পেছনের মঞ্চে ইতোমধ্যেই আবির্ভাব হয়েছে ওয়েব ২.০ এর পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট। আগামীর ইন্টারনেট হতে যাচ্ছে আরো মানবিক এবং তথ্যের গোপনীয়তা খুবই দৃঢ়ভাবে রক্ষিত হবে সেখানে, ঠিক যেমন ভিশন ছিলো ওয়েব ১.০ যাত্রার প্রাক্কালে। অর্থাৎ তথ্যের স্বার্থে এবং তার গোপনীয়তার প্রশ্নে আমরা আবার ফিরে যাচ্ছি ওয়েব ১.০-এ, কিন্তু তাদের বৈশিষ্ট্যে থেকে যাচ্ছে বিস্তর ফারাক।

টেক জায়ান্টদের হাতে তথ্যের সর্বময় ক্ষমতার সমাপ্তি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, নতুন ওয়েবে তথ্যের একচ্ছত্র অধিকার থাকবে শুধুমাত্র ব্যবহারকারীর।

২০০৬ সাল নাগাদ তুলনামূলক স্বচ্ছ এবং তথ্যের নিরাপত্তাদানে যে ভিশন তৈরি হয়েছিলো, তা বাস্তবে রূপদানের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং টেকনোলজি আমাদের কাছে ছিলো না। তথ্যের বিকেন্দ্রিকরণ, পিয়ার-টু-পিয়ার ডিজিটাল স্টোরেজ বা ব্যবহারকারীকেন্দ্রিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা যা-ই বলি না কেন, ব্লকচেইন প্রযুক্তির আবির্ভাবের পর ইন্টারনেটকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ার শুরু হয় পুরোদমে। অর্থাৎ নতুন ইন্টারনেট তৈরিতে আমাদের প্রধান অস্ত্রই হচ্ছে ব্লকচেইন প্রযুক্তি।

তথ্যের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং মোড়লবিহীন ইন্টারনেট

ওয়েব ২.০ আমাদের সামনে সম্ভাবনার নানা রাস্তা খুলে দেয়, কিন্তু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা খুব বেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, অর্থনীতির ভাষায় যাকে বলে মনোপলি। অর্থাৎ এই ভার্চুয়াল দুনিয়ার নিয়ন্ত্রণে কতিপয় মোড়ল তৈরি হয়। ফেসবুক, উবার, এয়ার বিএনবিসহ সমজাতীয় সাইবার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজেদের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে তাদের ডোমিনেশানের জায়গাগুলোয়। ওয়েব ৩.০ এর সম্পূর্ণ বিপরীত। বলা হচ্ছে, সকল লাভের কেন্দ্রিকতার বিকেন্দ্রিকরণ হবে নতুন ওয়েবে এবং গড়ে উঠবে তথ্য আদান-প্রদানের মুক্ত এক নেটওয়ার্ক।
এ বিষয়গুলো কল্পনা করা খুব বেশি কঠিন নয়। এ খবরগুলো আমাদের সামনে উঁকি দিচ্ছে, কারণ ইতিমধ্যেই ক্রিপ্টোকারেন্সি, ক্রিপ্টোফোন, ভিপিএন এবং স্টোরেজের বিকেন্দ্রিকরণ ইত্যাদি আমাদের সামনে চলে এসেছে এবং তা ভবিষ্যতের সকল প্রযুক্তির আমূল বদলে দেবার ইঙ্গিত। ব্লকচেইনই আমাদের কাছে নতুন হাতিয়ার, নিরাপদ তথ্যের আদান-প্রদান এবং মোড়লবিহীন ওয়েব তৈরিতে। আসছে ওয়েব ৩.০ এর কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে নেওয়া যাক একে একে।

১. ইন্টারনেটের কোনো মোড়ল থাকছে না

তথ্যের আদান-প্রদানে তৃতীয়পক্ষ থাকছে না আর। ইথারিয়াম বা বিটকয়েনের মতো ব্লকচেইনগুলো এমন প্লাটফর্ম আমাদের সামনে তুলে ধরেছে, যার নিয়মগুলো অমান্য করার সুযোগ নেই এবং সকল তথ্যই যেখানে সম্পূর্ণরূপে এনক্রিপ্টেড। প্রতিষ্ঠানগুলো তাই তার ব্যবহারকারীদের তথ্যের উপর একচ্ছত্র অধিকার হারাতে চলেছে। কোনো সরকার বা অথোরিটি চাইলেই কোনো সাইট বা সার্ভিস বন্ধ করে দিতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি পারবে না অন্য কারো তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে।

২. তথ্যের মালিকানা

প্রান্তিক ব্যবহারকারীরাই হবেন তার আদান প্রদান করা সকল তথ্যের একমাত্র নিয়ন্ত্রক। অনুমতি ব্যতিরেকে তথ্যের আদান-প্রদান কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। বর্তমানে যেমন আমাজন, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিশাল বিশাল সার্ভারে তার ব্যবহারকারীদের যাবতীয় তথ্যের সংগ্রহ করে রাখে এবং তা কেনা বেচা করতে বিলিয়ন ডলারের একটি মার্কেট গড়ে উঠেছে, সকল তথ্য এনক্রিপ্টেড হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো সেই ক্ষমতা হারাবে।

৩. হ্যাকিং এবং ডাটা ব্রিচিংয়ের হাত থেকে পরিত্রাণ

যেহেতু সকল তথ্যের বিকেন্দ্রিকরণ ঘটছে এবং তা সমগ্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকছে, হ্যাকারদের তা হাতিয়ে নিতে সমগ্র নেটওয়ার্কেই হানা দিতে হবে। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের সরকার এবং সিকিউরিটি এজেন্সিগুলো যে ধরনের টুল ব্যবহার করে থাকে, তা-ও হয়ে যাচ্ছে অকেজো। তাই ব্যক্তিগত তথ্যের লিকেজ থেকে আমরা মুক্তি পেতে যাচ্ছি, এই হলো মোদ্দাকথা।

৪. বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের মাঝে সম্পর্ক

বর্তমানে আমরা যেসব মোবাইল বা ওয়েব অ্যাপ ব্যবহার করি, তার সবই ওপারেটিং সিস্টেমের উপর নির্ভরশীল। যেমন বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সি আইওএসে অচল। সামনের দিনগুলো ওপারেটিং সিস্টেমের ওপর এমন নির্ভরশীলতা কমতে থাকবে।

৫. ব্লকচেইনভিত্তিক অবাধ সেবা

অর্থ বা অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদগুলো মুহূর্তেই দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পৌছাবে। ডেটা অসংখ্য আন্তঃসম্পর্কিত নোডের দ্বারা যুক্ত থাকবে তথ্যের প্রাচুর্যতা নিশ্চিত করতে এবং কয়েক ধাপে ব্যাকআপ রাখা হবে যা সার্ভার কোনো জটিলতা বা চুরি হওয়া ডেটার উদ্ধারে ভূমিকা রাখবে

যেভাবে কাজ করবে ওয়েব ৩.০

আগামির প্রযুক্তি হিসেবে সম্পূর্ণ তৈরি হতে ওয়েব ৩.০ কে পাড়ি দিতে হবে আরো কিছুটা পথ। থিওরি থেকে বাস্তবে রূপ নিতে আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। ওয়েব ৩.০ অর্থাৎ যে ডিসেন্ট্রালাইজ ওয়েব গড়ে উঠছে, তাতে প্রবেশের জন্য দরকার হবে একটি মাত্র সিড। এই একটি মাত্র পরিচয় নিয়েই আমরা বিভিন্ন ডিঅ্যাপ এবং ওয়েব সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবো। একটি ওয়েব ব্রাউজার তখনও লাগবে এবং সেগুলোকে গড়ে তোলা হবে ওয়েব ২.০ এর সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ।

সাদাচোখে দেখা যাবে, ওয়েব ২.০ থেকে ওয়েব ৩.০ তে পরিবর্তিত হবে তেমন কোনো বেগ পেতে হবে না সাধারণ ব্যবহারকারীদের। কিন্তু তারা এখন যা ব্যবহার করে এবং ওয়েব ৩.০ তে যা ব্যবহার করবে, তার গঠনে থাকবে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। বর্তমানের কিছু প্রযুক্তিকে যারা প্রতিস্থাপন করে দিবে সামনের দিনগুলো, তাদের একনজরে দেখে নেওয়া যাক এবার।
ওয়েব ২.০ যেমনটি ওয়েব ১.০ কে একেবারে বিলুপ্ত করে দেয়নি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনও এমন ওয়েবসাইট আমাদের চোখে পড়ে এবং প্রয়োজন হয়, তেমনি ওয়েব ৩.০ সময়ের সাথে আমাদের বিদ্যমান ইন্টারনেট ব্যবস্থায় নিজের জায়গা করে নেবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হয়তো আগামি তিন বছরের মধ্যেই ওয়েব ৩.০ আমাদের যাপিত জীবনের অংশ হবে উঠবে। ওয়েব ৩.০ এর ট্রেনটি ইতিমধ্যে তার প্লাটফর্ম ছেড়ে এগিয়ে গেছে বেশ খানিকটা। তথ্যভিত্তিক দুনিয়ায় ঘটতে যাওয়া আগাম এই বিপ্লবের খবর শেষ করছি তথ্যের নিরাপদ আবাদের সাইবার দুনিয়ার অপেক্ষায়।

যে আবিষ্কার গুলি ভুল করে হয়েছিল সাথে আরো ৫টি মজার ঘটনা | জেনে নিতে পারেন সবাই।


ভুল থেকে যদি দারুণ কিছু হয়, তবে মন্দ কি? আর সেই “দারুণ কিছু” যদি হয় পৃথিবী কাঁপিয়ে দেওয়া সব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, তবে তো কথাই নেই! মজার ব্যাপার হচ্ছে,  বিজ্ঞানের ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলো আসলে আবিষ্কার করার কথা কল্পনাই করেননি আবিষ্কারক! যা হওয়ার তা হয়েছে নিতান্তই দুর্ঘটনা বা ভুলবশত। এমন আরো কিছু আবিষ্কার আর তার পেছনের মজার সব ঘটনা নিয়ে এই লেখা।

মাইক্রোওয়েভ ওভেনঃ
গবেষণাগারে খাওয়া–দাওয়া করা নিশ্চয়ই খুব কাজের কথা নয়! কিন্তু এই কাজটি করতে গিয়েই পার্সি স্পেনসার নামের এক আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার যুগান্তকারী এক আবিষ্কার করে ফেলেন!

দারুণ সব লেখা পড়তে ও নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে ঘুরে এসো আমাদের ব্লগের নতুন পেইজ থেকে!
তিনি ম্যাগনেট্রন নামে একটি ভ্যাকুয়াম টিউব নিয়ে কাজ করছিলেন, যেটি থেকে মাইক্রোওয়েভ নির্গত হয়। টিউবের সামনে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবছিলেন তিনি, হঠাৎ অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন বিচিত্র একটি ব্যাপার ঘটেছে– তার প্যান্টের পকেটে রাখা চকলেটের বার গলতে শুরু করেছে!


বুদ্ধিমান বিজ্ঞানী স্পেনসার তখনই বুঝতে পারেন একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার ততক্ষণে তিনি করে ফেলেছেন।

বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর ১৯৪৫ সালে তিনি প্রথম মাইক্রোওয়েভ ওভেন তৈরি করেন, আকারে সেটি ঢাউস একটি জিনিস ছিল। ১৯৬৭ সাল থেকে মাইক্রোওয়েভ ওভেন যুক্তরাষ্ট্রের ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়। এখন তো পৃথিবীজুড়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের জনপ্রিয়তার জুড়ি মেলে।

পেনিসিলিন:
পেনিসিলিন চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি অসামান্য আবিষ্কার। এটি পৃথিবীতে আবিষ্কৃত প্রথম এ্যান্টিবায়োটিক যা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। পেনিসিলিন আবিষ্কার করেছিলেন আলেকজান্ডার ফ্লেমিং, যিনি ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং জীবাণুতত্ত্ববিদ।

১৯২১ সালের ঘটনা, তখন ইংল্যান্ডের সেন্ট মেরিজ মেডিকেল স্কুলের ল্যাবরেটরিতে কাজ করতেন আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। কয়েকদিন ধরে তিনি ঠাণ্ডায় ভুগছিলেন। জীবাণু কালচার নিয়ে ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় হঠাৎ তীব্র হাঁচি এলো। ফ্লেমিং নিজেকে সামলাতে পারলেন না, সেটটা সরানোর আগেই হাঁচির দমকে নাক থেকে কিছুটা সর্দি সেটের উপর পড়ে গেলো!

পুরো জিনিসটা নষ্ট হয়ে গেল দেখে সেটটা সরিয়ে রেখে নতুন আরেকটা সেট নিয়ে কাজ শুরু করলেন। পরদিন ল্যাবরেটরিতে ঢুকে সরিয়ে রাখা সেই সেটটার দিকে নজর পড়ল তার, ভাবলেন সেটটা ধুয়ে কাজ করবেন। কিন্তু সেটটি হাতে তুলেই চমকে উঠলেন ফ্লেমিং। অবাক ব্যাপার, গতকালের জীবাণুগুলো আর নেই! তিনি দেহ থেকে বের হওয়া এই প্রতিষেধকটির নাম দিলেন লাইসোজাইম।

অনেক বছর পরের কথা, ১৯২৮ সালে ফ্লেমিং স্টেফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করছিলেন লন্ডনের এক ল্যাবরেটরিতে। মাঝে গবেষণা স্থগিত রেখে তিনি বেড়াতে যান স্কটল্যান্ডে। যাবার সময় তিনি স্টেফাইলোকক্কাসটি একটি কাঁচের পাত্রে রেখে যান এবং একটি ভুল করেন- গবেষণাগারের জানালা খুলে রেখে যান! এই ভুলের বদৌলতেই ফ্লেমিং চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিসটি আবিষ্কার করেন।

দু’সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে গবেষণাগারে ফিরে তিনি আবিষ্কার করেন, কোন ফাঁকে ঝড়ো বাতাসের দমকে খোলা জানালা দিয়ে ল্যাবরেটরির বাগান থেকে কিছু ঘাস পাতা উড়ে এসে পড়েছে জীবাণু ভর্তি প্লেটের উপর। তিনি প্লেটগুলোতে দেখলেন জীবাণুর কালচারের মধ্যে স্পষ্ট পরিবর্তন।

ফ্লেমিং বুঝলেন এই আগাছাগুলোর মধ্যে এমন কিছু আছে যার জন্য পরিবর্তন ঘটেছে, পরীক্ষা করে দেখা গেলো আগাছাগুলোর উপর একরকম ছত্রাক জন্ম নিয়েছে। সেই ছত্রাকগুলো বেছে বেছে জীবাণুর উপর দিতেই জীবাণুগুলো ধ্বংস হয়ে গেল! তিনি বুঝতে পারলেন, তার এতোদিনের গবেষণা অবশেষে সার্থক হয়েছে! ছত্রাকগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম ছিল পেনিসিলিয়াম নোটেটাম, তাই তিনি এর নাম দিলেন পেনিসিলিন।

১৯৪৫ সালে পেনিসিলিন আবিষ্কার এবং মানবকল্যাণে এর অসামান্য অবদানের জন্য আলেকজান্ডার ফ্লেমিং নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন। পুরষ্কার পেয়ে ফ্লেমিং কৌতুক করে বলেন, ‘এ পুরষ্কারটি ঈশ্বরের পাওয়া উচিত, কারণ তিনিই সবকিছুর আকস্মিক যোগাযোগ ঘটিয়েছেন।’

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার এই পেনিসিলিন। জীবনের ছোট্ট একটি ভুলের পুরষ্কার স্বরুপ আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ইতিহাসের পাতায় চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন।

এক্স–রে
এক্সরে বা রঞ্জন রশ্মি হচ্ছে একটি তড়িৎ চৌম্বক বিকিরণ। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য টেন ইনভার্স টেন মিটার যা সাধারণ আলোর চেয়েও অনেক কম। তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম থাকার কারণে এটি যে কোনো পদার্থকে খুব সহজেই ভেদ করতে পারে।

“ক্যাথোড রে” আবিষ্কার হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু গবেষকরা তখনও জানতেন না এটি ব্যবহার করে মানবদেহের কঙ্কালের ছবি তোলা সম্ভব। ১৮৯৫ সালে জার্মান পদার্থবিদ উইলহেম রঞ্জন একটি কালো কাগজে ঢাকা গ্লাস টিউবে ক্যাথোড রশ্মি চালিয়ে পরীক্ষা করছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল কাঁচ থেকে ক্যাথোড রে বের হয় কিনা সেটি পরীক্ষা করা।

কিন্তু এমন সময় একটি মজার ঘটনা ঘটলো, রঞ্জন লক্ষ্য করলেন,  তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন তার কয়েক ফুট দূরে একরকম আলোক রশ্মি দেখা যাচ্ছে! তিনি ভাবলেন কার্ডবোর্ড কোথাও ফেটে গিয়ে হয়ত আলো বের হচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেলো- কার্ডবোর্ড ফেটে নয় বরং কার্ডবোর্ড ভেদ করে রশ্মি বের হচ্ছে!

ঘটনা দেখে রঞ্জনের মাথায় বিচিত্র একটি আইডিয়া খেলে গেলো-  যে রশ্মি কার্ডবোর্ড ভেদ করতে পারছে তা মানবদেহ কেন ভেদ করতে পারবে না? যেই ভাবা সেই কাজ, তিনি তার স্ত্রীর হাত সামনে রেখে পরীক্ষা চালালেন এবং ইতিহাস বদলে দেওয়া একটি ঘটনা ঘটলো- প্রথমবারের মতো কাটাছেঁড়া না করেই মানবদেহের কঙ্কালের ফটোগ্রাফিক ইমেজ তৈরি সম্ভব হলো! রঞ্জনের স্ত্রী নিজের কঙ্কালের ছবি দেখে আঁতকে উঠে বলেন, “আমি যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুকে দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে!”

অদৃশ্য এই রশ্মির বৈশিষ্ট্য অজানা থাকায় রঞ্জন এর নাম দেন এক্স-রে। অবশ্য একে তার নাম অনুসারে অনেকে রঞ্জন রশ্মি নামেও ডাকে।

ক্লোরোফর্ম:
সেকালে অস্ত্রোপচার করা হতো কোনরকম চেতনানাশক ছাড়া, ফলে রোগীকে অমানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো অস্ত্রোপচার টেবিলে। এ অবস্থার নিরসন ঘটে ক্লোরোফর্ম আবিষ্কারের পরে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ক্লোরোফর্ম আবিষ্কারের ঘটনাটি দুর্ঘটনার চেয়ে কম কিছু নয়!

স্যার জেমস ইয়ং সিম্পসন বহুদিন ধরেই চেতনানাশক নিয়ে গবেষণা করছিলেন। একদিন এডিনবার্গে নিজ বাড়িতে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে আলাপচারিতার ফাঁকে তার মনে হলো নিজের আবিষ্কার পরীক্ষা করে দেখলে কেমন হয়?


যেই ভাবা সেই কাজ, একটি শিশিতে করে ক্লোরোফর্ম অতিথিবৃন্দের সামনে আনলেন। তারপর আর কারো কিছু মনে নেই! হুঁশ ফিরলো পরদিন সকালে, এদিকে অতিথিরা একেকজন বেহুঁশ হয়ে এদিক ওদিক পড়ে আছেন। শুরুতে তিনি ভয়ই পেয়ে গেলেন। পরে সবার জ্ঞান ফিরলে আশ্বস্ত হন।

যদিও পরবর্তীতে এমন বিপজ্জনক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন তিনি, কারণ বর্ণহীন এই জৈন যৌগটি খোলা জায়গায় রেখে দিলে উড়ে যেতে থাকে। বাতাসে ক্লোরোফর্মের পরিমাণ খুব বেশি হয়ে গেলে তা মারাত্মক ক্ষতিকর। যেহেতু এটি সরাসরি স্নায়ুর ওপর ক্রিয়া করে, তাই  বেশি পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা থেকে শুরু করে কিডনি ও লিভারের স্থায়ী সমস্যা তৈরি হতে পারে।

বড় ধরনের অপারেশনে ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করা হয়ে থাকে

যাই হোক, সিম্পসন অবশেষে ১৯৪৭ সালে এই আবিষ্কারের কথা জানান সবাইকে, এবং মাত্র তিন বছরের মাথায় শুরু হয়ে যায় রোগীদের অপারেশনের বেলায় অজ্ঞান করার কাজে আন্তর্জাতিকভাবে ক্লোরোফর্মের ব্যবহার।

ক্লোরোফর্ম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় রাসায়নিক ল্যাবরেটরি ও বাণিজ্যিকভাবে প্লাস্টিক তৈরিতে। এর পরই ব্যবহৃত হয় মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর শরীরের কিছু অংশ অবশ করতে বা সাময়িকভাবে অজ্ঞান করতে। রোগীদের দেহের সূক্ষ্ম কাটাকাটি থেকে শুরু করে বড় ধরনের অপারেশনে ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ডায়নামাইট
নোবেল পুরষ্কারের প্রবক্তা হিসেবে আলফ্রেড নোবেল চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ইতিহাসে, তিনি ছিলেন একজন সুইডিশ রসায়নবিদ এবং ইঞ্জিনিয়ার। রাসায়নিক বিভিন্ন বিপদজনক তরল পদার্থ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নোবেল এবং তার ল্যাবরেটরির মানুষজন বেশ কয়েকবার ভয়াবহ সব দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনা খুব মারাত্মক ছিল, ১৮৬৪ সালে সুইডেনের স্টকহোমে সেই বিস্ফোরণে আলফ্রেড নোবেলের ছোটভাই সহ আরো কয়েকজন মারা যায়।

ভাইয়ের মৃত্যুতে নোবেল ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়েন। এই ঘটনার পর আলফ্রেড নোবেল নিরাপদভাবে বিস্ফোরণ ঘটানোর উপকরণ আবিষ্কারের জন্য উঠে-পড়ে লাগেন।

মজার ব্যাপার হলো মারাত্মক বিস্ফোরক নাইট্রোগ্লিসারিনকে সামলানোর উপায় নোবেল খুঁজে পান আরেকটি দুর্ঘটনার মাধ্যমে! একবার নাইট্রোগ্লিসারিন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়ার সময় নোবেল দেখেন একটি পাত্র ছিদ্র হয়ে খুলে গেছে। দেখা গেল পাত্র মোড়ানো ছিল যে জিনিসটি দিয়ে সেটি ভয়াবহ বিস্ফোরক নাইটড়োগ্লিসারিনকে খুব ভালোভাবে শোষণ করেছে। কিয়েসেলগার নামে এক ধরনের পাললিক শিলার মিশ্রণ দিয়ে পাত্রগুলো মোড়ানো ছিল।

নাইট্রোগ্লিসারিন যেহেতু তরল অবস্থায় খুব বিপদজনক, তাই নোবেল সিদ্ধান্ত নেন এই কিয়েসেলগারকে তিনি বিস্ফোরকের স্ট্যাবিলাইজার হিসাবে ব্যবহার করবেন। ১৮৬৭ সালে নোবেল তার আবিষ্কৃত নিরাপদ কিন্তু মারাত্মক শক্তিশালী এই বিস্ফোরকটি ‘ডিনামাইট’ নামে পেটেন্ট করান।

অ্যাপ কি? অ্যাপ Vs. সফটওয়্যার |

যদিও এই শব্দটি নতুন নয়, কিন্তু কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে স্মার্টফোনের আনাগোনা শুরু হওয়ার সময় থেকে অ্যাপ (Apps) — শব্দটি শোনেন নি বা এটি বোঝেন না, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। আজকের এই মডার্ন টেকের যুগে, প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য রয়েছে অ্যাপ, কিন্তু সমস্যা সেখানে নয়, সমস্যা হচ্ছে যখন কথা বলা হয় অ্যাপ Vs. সফটওয়্যার নিয়ে, তখন অনেকেই বিভ্রান্তির মধ্যে পরে যায়। অনেকে মনে করে এই দুইটি একই জিনিষ, আবার অনেকে মনে করে এই দুইটি আলাদা জিনিষ। বেশিরভাগ ধারণা কারীগন মনে করেন, অ্যাপ হচ্ছে মোবাইলের জন্য আর সফটওয়্যার হলো কম্পিউটারের জন্য। তো এরকম অগুনতি বিষয় রয়েছে, হয়তো আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ার আগে যেগুলো জানতেন না। আমি এই আর্টিকেলে অ্যাপ কি, এর প্রকারভেদ, সফটওয়্যার আর এটি আলাদা জিনিষ কিনা — ইত্যাদি নানান বিষয়ে আলোচনা করবো।

অ্যাপ কি?

চলুন এই টপিকের সবচাইতে বড় প্রশ্ন এখানেই শেষ করে দেই, অ্যাপ শব্দটি আসলে “অ্যাপ্লিকেশন” শব্দটির সংক্ষিপ্ত রুপ এবং অবশ্যই এটি এক ধরণের সফটওয়্যার যেটা আলাদা আলাদা প্ল্যাটফর্মে রান করতে পারে। তো বুঝলেন, অ্যাপ আর সফটওয়্যার একই জিনিষ, তবে আজকের মডার্ন টাইপের সফটওয়্যার বা কম্পিউটার প্রোগ্রাম গুলোকে অ্যাপ বলা হয়। এটি অনেক টাইপের হতে পারে, হতে পারে মোবাইলে রান করছে, কম্পিউটারে রান করছে, আবার যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইজেও রান করতে পারে। কিছু অ্যাপ্লিকেশন ওয়েব ব্রাউজারেও রান করতে পারে, কিছু অ্যাপ্লিকেশন অফলাইন চলে পারে আবার কিছু অ্যাপ্লিকেশন অনলাইন চলতে পারে। তবে অ্যাপকে সাধারণত এক টাইপের লাইটওয়েট সফটওয়্যার বলে ধরা হয়, মানে এটিকে ফুল শক্তিশালী সফটওয়্যার বলে বিবেচনা করা হয় না। আর এই জন্যই অ্যাপ টার্মটি বিশেষ করে স্মার্টফোনের সাথে বা ওয়েবের সাথে শুনতে পাওয়া যায়, এবং কম্পিউটার টার্মের ক্ষেত্রে মানুষ সফটওয়্যার টার্মটি ব্যবহৃত করে।
অ্যাপ্লিকেশন যেকোনো প্ল্যাটফর্ম বা যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরি করা এবং ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচের প্যারাগ্রাফে অ্যাপের বিভিন্ন প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করলাম।

অ্যাপের প্রকারভেদ
অ্যাপস মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে—ডেক্সটপ অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন। যদি কথা বলি ডেক্সটপ অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে, তো বুঝতেই পাড়ছেন এই টাইপের অ্যাপ্লিকেশন ফুল ফর্ম সফটওয়্যার হয়ে থাকে, মানে এই প্রোগ্রাম গুলো অনেক শক্তিশালী হয়, অনেক রিসোর্স ডিম্যান্ড করে সিস্টেম থেকে এবং কাজ করার জন্য সরাসরি হার্ডওয়্যার অ্যাক্সেস ডিম্যান্ড করে। ডেক্সটপ প্রোগ্রাম গুলো বিশেষ করে বড় স্ক্রীনের জন্য ডিজাইন করা হয়ে থাকে এবং প্রোগ্রাম গুলো মাউস এবং কী-বোর্ড ব্যবহার করে অ্যাক্সেস করার উপযোগী হয়।

অপরদিকে যদি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কথা বলি, সাধারণত এগুলো লাইটওয়েট হয়ে থাকে এবং ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ হয়, একেবারেই কোন কমপ্লেক্স বিষয় থাকে না। আর এজন্য মোবাইল অ্যাপ গুলো ডেক্সটপ অ্যাপ্লিকেশনের মতো পাওয়ারফুল হয় না। মোবাইল অ্যাপের আইকোন গুলোকে সাধারণত বড় বড় করে ডিজাইন করা হয়, কেনোনা বিশেষ করে যাতে এগুলো টাচ স্ক্রীনের উপর কাজ করতে পারে।

পরিশেষে যদি কথা বলি, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে তো সেগুলো অনেক সময় ডেক্সটপ অ্যাপ্লিকেশনের মতো পাওয়ারফুল হয় কিন্তু এর একটি ডাউন সাইড হচ্ছে ইন্টারনেট কানেকশন ছারা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা যায় না, কেনোনা সেগুলো কোন কম্পিউটার বা মোবাইল ইন্সটল না থাকে ক্লাউড কম্পিউটারে বা ওয়েব সার্ভারে ইন্সটল থাকে, তাই অ্যাক্সেস করার জন্য ইন্টারনেট অবশ্যই প্রয়োজনীয় হয়। যদি কোন অ্যাপ্লিকেশন ওয়েব এবং ডেক্সটপ উভয়ের সাথে মিক্স অবস্থায় থাকে, তাহলে সেটাকে হাইব্রিড অ্যাপ্লিকেশন বলা হবে। হাইব্রিড অ্যাপ গুলোকে অফলাইনে কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায় এবং অফলাইনে এটি আপনার মেশিন থেকে রিসোর্স নিয়ে কাজ করে, কিন্তু যখনই আপনি অনলাইন আসবেন, এই অ্যাপ গুলো ক্লাউড থেকে কাজ করতে আরম্ভ করে দেয়।


একই অ্যাপ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের জন্য প্রাপ্য হতে পারে, আবার অনেক তৃতীয় পক্ষ ডেভেলপার রয়েছে যারা অন্যের অ্যাপ গুলো ডেভেলপ করে পাবলিশ করে। এ ব্যাপারে আরো পরিষ্কার বুঝতে ন্যাটিভ অ্যাপ ও থার্ড পার্টি অ্যাপের পার্থক্য — এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেন।

ক্রস প্ল্যাটফর্ম

যেকোনো অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার সর্বদায় চায় তাদের প্রোগ্রামকে যেন যেকোনো প্ল্যাটফর্মে চালানো যায়। এজন্য একই প্রোগ্রাম ডেক্সটপ, মোবাইল এবং ওয়েব ভার্সনের থাকতে পারে। যদি কথা বলি অ্যাডোবি ফটোশপের কথা, সেটা ডেক্সটপের জন্য পাওয়ারফুল ফটো এডিটর সফটওয়্যার আর এটি রান করতে কম্পিউটার থেকে অনেকখানি রিসোর্স প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে। মোবাইলের জন্য এই একই কোম্পানির অ্যাপ রয়েছে, যেমন ফটোশপ স্কেচ, এটি লাইটওয়েট মোবাইল প্রোগ্রাম। আবার অ্যাডোবি ফটোশপ এক্সপ্রেস এডিটর হচ্ছে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, অর্থাৎ একে কম্পিউটার বা মোবাইলে কোথাও ইন্সটল করার দরকার নেই, এ সরাসরি ইন্টারনেটের সাহায্যে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার থেকেই রান করানো যাবে।
অপরদিকে যদি কথা বলি, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড প্রোগ্রামটি নিয়ে, তো কম্পিউটারের জন্য ফুল ওয়ার্ড সফটওয়্যার রয়েছে যেখানে সম্পূর্ণ ফিচার পেয়ে যাবেন। ঠিক ডেক্সটপের মতোই কিন্তু লিমিটেড ফিচার এবং লাইটওয়েট প্রোগ্রাম মোবাইলের জন্য রয়েছে অ্যাপ রুপে, কিন্তু মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ওয়েব ভার্সন কিন্তু ডেক্সটপ ভার্সনের মতোই পাওয়ারফুল, যেটা ব্রাউজার দিয়ে অ্যাক্সেস করা সম্ভব। তবে কিছু অ্যাপ্লিকেশন আবার মোবাইলে আছে, ওয়েব ফর্মে আছে কিন্তু ডেক্সটপে নেই। যেমন জিমেইল কিন্তু মূলত একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, এর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনও রয়েছে, কিন্তু ডেক্সটপ সফটওয়্যার নেই। ক্রোম ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যতিত ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন গুলোকে ফিজিক্যাল ইন্সটল করার কোনই দরকার থাকে না।

অ্যাপস ডাউনলোড

যেকোনো অ্যাপস ডাউনলোড করার জন্য আপনার অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অফিয়াল জায়গা রয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করার জন্য গুগল প্লে বা অ্যামাজন স্টোর রয়েছে, সাথে আরো অনেক তৃতীয়পক্ষ ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখান থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করতে পাড়বেন। অ্যাপেল ডিভাইজ গুলোর জন্য রয়েছে অ্যাপ স্টোর। তবে কম্পিউটারের জন্য বিষয়টি একটু আলাদা। এক্ষেত্রে আন-অফিশিয়াল সোর্সই বেশি। যদিও উইন্ডোজ নতুন করে স্টোর তৈরি করেছে ডেক্সটপের জন্য, কিন্তু বেশিরভাগ সফটওয়্যার গুলো আপনি আন-অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকেই খুঁজে পেতে পাড়বেন।


সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সময় বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজনীয়, কেনোনা সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সময়ই মানুষ বেশিরভাগ টাইম কম্পিউটারকে ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত করিয়ে ফেলে। আপনি উইন্ডোজ কম্পিউটার নিরাপদে সফটওয়্যার ডাউনলোড করার জন্য এই পাঁচটি ফ্রী সফটওয়্যার ডাউনলোডিং সাইট ব্যবহার করতে পারেন।

আশা করছি, এই সম্পূর্ণ টার্মটি সম্পর্কে আপনার মনে আর কোন প্রকারের দ্বিধাদন্দ জমা হয়ে নেই। আর্টিকেলটি আপনার জন্য কতোটা সাহায্য পূর্ণ ছিল, আমাকে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আর যেকোনো প্রশ্ন বা মতামতে তো অবশ্যই নিচে কমেন্ট করুণ।

আইএমইআই নাম্বার কি? এটি আসলে কীসের জন্য?


আমরা সবাই কমবেশি একটা জিনিসের নাম অবশ্যই শুনেছি, তা হল আইএমইআই নাম্বার (IMEI)। মোবাইল বা স্মার্টফোনের প্যাকেজিং এর সাথে আমরা কিছু স্টিকার দেখতে পাই, আর এখানে এইসব IMEI নাম্বার লেখা থাকে। এই IMEI নাম্বার দ্বারা আসলে কি বোঝায় এবং এই IMEI নম্বর এর কাজ কি, সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না।

তবে প্রথমত বলে রাখি, আপনার ফোনের জন্য এই আইএমইআই (iMEI) নাম্বার অতি জরুরী। আর ফোন কেনার পরপরই আপনার উচিত এই আইএমইআই নম্বরটি কোথাও নোট করে রাখা। আপনার বিদ্যালয়ে বা কলেজে আপনার যেমন আলাদা আইডেন্টিটি ছিলো বা আছে, তেমনই আইএমইআই একেকটি মোবাইল ফোন বা সমমানের ডিভাইসের একেকটি ইউনিক আইডেন্টিটি। আর এইসব আইএমইআই (IMEI) নাম্বার থেকে ফোনের ফোনের মডেল থেকে শুরু করে সিরিয়াল নাম্বার সকল কিছুই বের করা সম্ভব।


বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন খুবই প্রচলিত একটি প্রযুক্তি পন্য। আর ধীরে ধীরে এটি আরও ফিচারফুল এবং আরো দামি হয়ে যাচ্ছে। কমবেশি সবাই ইচ্ছা করে অন্তত একটা স্মার্টফোন তো কিনছেনই। আর সেকারনে এইসব স্মার্টফোনের ব্যাপক প্রসারের ফলে চোরদেরও অন্যতম টার্গেট হয়ে দাড়িয়েছে। তো আপনার স্মার্টফোনটি হয়ত আপনি দূর্ঘটনাবশত হারিয়ে ফেললেন; কেউ চুরি করল। তখন সেই স্মার্টফোন কিভাবে ফিরে পাবেন,বা নজর রাখবেন? চোর তো সীমকার্ড খুলেও ফেলতে পারে,এমন কোন নাম্বার আছে,যা পরিবর্তন করা যায় না? এইসময় আপনাকে সাহায্য করবে আপনার ফোনের IMEI নাম্বার। আজ আমরা জানব IMEI সম্পর্কে বিস্তারিত।

আইএমইআই নাম্বার কি?

আইএমইআই(IMEI) এর পূর্নরূপ হলো International Mobile Equipment Identity। এই IMEI প্রতিটি মোবাইল ডিভাইসের জন্য একটি সংখ্যাসূচক পরিচয় বা সংখ্যাসূচক আইডিন্টিটি। আর এই কারনে প্রতিটি আইএমইআই নম্বরই অনন্য তথা একটি আরেকটির থেকে ভিন্ন।

মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানির কাছে আপনার ফোনের সব তথ্য এই আইএমইআই নম্বরের মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকে। আর তাই আপনি হয়ত যখন কোন কারনে আপনার ফোন সার্ভিসিং এ নিয়ে গিয়েছেন কাস্টমার কেয়ারে, তারা আপনার ফোন খুলে আইএমইআই নম্বরটি চেক করে ফোনের সব ডাটা বের করেছে ; যেমনঃ ওয়ারেন্টি আছে কিনা, কবে বিক্রি হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সাধারনত মূল আইএমইআই নম্বরটি হয়ে থাকে ১৪ ডিজিটের। তবে পুরো আইএমইআই নম্বরটি ভেরিভাই এর জন্য এর সামনে আরো একটি সংখ্যা থাকে যা মিলে পুরো আইএমইআই নম্বরটি হয়ে যায় ১৫ ডিজিটের। তবে এখন অনেক আইএমইআই নম্বরে ডিভাইসের সফটওয়্যার ভার্সন সংস্করন এর জন্য আরেকটি সংখ্যা থাকে, যার ফলে আইএমইআই নম্বরটি হয়ে যায় ১৬ ডিজিটের। আর এসব আইএমইআই নম্বরকে IMEISV’ও বলা হয়।

২০০৪ সাল থেকে আইএমইআই (IMEI) নাম্বার AA-BBBBBB-CCCCCC-D ফরম্যাটে বিন্যাস্থ হয়ে আসছে। আর এখানে A এবং B সেকশনকে বলা হয়ে থাকে Type Allocation Code বা TAC। আর IMEI নম্বরের এই TAC অংশ থেকে ফোনটির ম্যানুফ্যাকচারার বা তৈরিকারক এবং ফোনটির মডেল নম্বর সম্পর্কে জানা যায়। যেমনঃ স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৭ এর TAC কোড হল 32-930400, গুগল নেক্সাস ৪ বা এলজি E960 এর TAC কোড হল 35-391805 ইত্যাদি। অর্থাত ১৫ ডিজিট বা ১৬ ডিজিটের সম্পূর্ণ আইএমইআই নম্বরে এই TAC হয়ে থাকে ৮ ডিজিটের, এই ৮ ডিজিট এর ভেতর ২ টি ডিজিট আবারও  ভেরিভাই এর জন্য, তাই মূল TAC হয়ে থাকে ৬ ডিজিটের ।

এবার আসি C সেকশনের কথায়। আইএমইআই নম্বরের ভেতরকার C সেকশনটি মোবাইল ফোনের একটি ইউনিক বা অনন্য সিরিয়াল নম্বর নির্দেশ করে। এখানে স্মার্টফোন তৈরিকারকরা একেকটি স্মার্টফোনে তাদের পছন্দমত ইউনিক নম্বর দিয়ে থাকে। আর এই D সেকশনে যে একটি নম্বর থাকে তা সম্পূর্ণ আইএমইআই নম্বরটি ভেরিফিকেশনের জন্য। ব্যাস! এইসব নিয়ে আপনার স্মার্টফোনের আইএমইআই (IMEI) নম্বর।

আইএমইআই নাম্বার দেখবেন কিভাবে?
আপনি অনেক উপায়ে আইএমইআই(IMEI) নম্বরটি দেখতে পারেন । তবে আমার কাছে ফোনের ডায়ালার অ্যাপ থেকে এই নম্বরটি চেক করা সবচাইতে সহজ লাগে। আপনার ফোনের  ডায়ালর অ্যাপে *#06# ডায়াল করলেই ফোনের আইএমইআই নম্বরটি দেখতে পারবেন।

আবার এন্ড্রয়েড ডিভাইসের  Settings>About>Phone>Status এ গিয়ে আপনি আপনার IMEI নম্বরটি দেখতে পারবেন। আবার অ্যাপেল ইউজাররা  Settings>General>About এ গিয়ে IMEI নম্বর দেখতে পারবেন। আপনার আপনার ফোনের বক্সে এবং ওয়ারেন্টি কার্ডেও আপনি IMEI নম্বরটি খুঁজে পাবেন। যাই হোক,যেখান থেকেই দেখুন না কেন,অবশ্যই নম্বরটি নোট করে রাখবেন।

আইএমইআই নাম্বার কতটা দরকারি

অনেক জাল মোবাইল ফোন, যেমন: নকল আইফোন এগুলোতে IMEI নাম্বার থাকে না। আবার অনেক নকল বা জাল ফোনে খারাপ বা কারাপ্টেড IMEI নম্বর থাকে। তাই আপনার ফোন আসল কিনা, বা IMEI নম্বর ভ্যালিড কিনা তা জানতে IMEI.info এর মত অনলাইন চেকার ব্যবহার করতে পারেন। একটা কথা মনে রাখবেন, যে ফোনে IMEI নেই বা কারাপ্টেড IMEI -এর মানে সে ফোন নকল এবং আপনি কেনার আগে IMEI চেক করে কিনবেন।

এখন অ্যাপেল বা শাওমির মত ওয়েবসাইটে তাদের ডিভাইসের IMEI ভেরিফাই করার অপশন থাকে, তাই কেনার আগে IMEI ভেরিফাই করে আসলটা কিনবেন।

আইএমইআই নাম্বার দিয়ে কি হয়

IMEI হল একটি মোবাইল ডিভাইসের কমপ্লিট আইডেন্টিটি। ধরুন আপনার ফোন হারিয়ে গেছে, তবে আপনি নানা এনড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপ ব্যবহার করে, কেবল IMEI দিয়ে ফোনটি ট্র্যাক করতে পারেন। আবার আপনি আপনার হারিয়ে যাওয়া ফোনের জন্য থানায় অভিযোগ করতে গেলে, তারাও IMEI নাম্বার চাবে এবং তা দিয়ে আপনার ফোন ট্র্যাক করতে পারবে।

পরিশেষে 

গাড়িঘোরার জন্য একটি নম্বর থাকে যাকে বলা হয়, Vehicle Identification Number বা VIN ; আর মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ঠিক একই IMEI। এই নম্বরটি আপনার প্রিয় মোবাইল ফোনের জন্মসনদ। আবার আপনার সীম নম্বরের সাথে এর তুলনা করবেন না, কেননা IMEI নাম্বার সাধারনত পরিবর্তন যোগ্য নয়। IMEI পরিবর্তন বা ক্লোন নিয়ে পরবর্তীতে কোনো আর্টিকেল প্রকাশ করব। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। নিচে আপনার  মতামত জানাতে ভুলবেন না।

নিজেকে ডিলিট করে দিন ইন্টারনেট থেকে!


যদি সিকিউরিটি আর প্রাইভেসির কথা চিন্তা করা হয়, অবশ্যই ইন্টারনেট একটি ভয়াবহ জায়গা। সাইবার ক্রাইম, অজানা র‍্যান্ডম সাইবার অ্যাটাক, র‍্যানসমওয়্যারে কম্পিউটার আক্রান্ত করানো, লাখো টাইপের অনলাইন ম্যালওয়্যার, ফেক ভাইরাল নিউজ —ইত্যাদি সহ আরো লাখো কোটি হুমকির বিষয় দিয়ে ইন্টারনেট পরিপূর্ণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হতে পারে আপনি শেষমেশ সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন, ইন্টারনেট থেকে নিজের অস্তিত্ব মুছে ফেলবেন, সৌভাগ্যবসত এটা অসম্ভব কোন ব্যাপার নয়, এই আর্টিকেলে দেখানো পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে আপনি সহজেই নিজেকে নেট থেকে মুছে ফেলতে পাড়বেন।

অনলাইন অ্যাকাউন্ট গুলো মুছে ফেলুন
আপনি যদি মুটামুটি সময় ধরে অনলাইন ভিজিট করে থাকেন, তো আমার আন্দাজ ভুল না হলে, নিশ্চয় আপনার অগুনতি অনলাইন অ্যাকাউন্ট রয়েছে। অনলাইনে আপনার পরিচয় খোলাসা করতে সবচাইতে বেশি সাহায্য করে আপনার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক আইডি যেমন- ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, গুগল ইত্যাদি আইডি। শুধু সোশ্যাল আইডি নয়, হতে পারে আপনার বহুত পাবলিক অ্যাকাউন্টও রয়েছে, আপনার গুগল ব্লগার বা ওয়ার্ডপ্রেসে ব্লগও রয়েছে হয়তো। আবার হতে পারে আপনি কোন অনলাইন শপিং সাইটে অ্যাকাউন্ট করে রেখেছেন, তারা আপনার প্রোফাইল বা আপনার টিউমেন্ট পাবলিক করে রেখেছে হয়তো।

এই এই অ্যাকাউন্ট গুলো থেকে মুক্তি পেতে আর অনলাইনে আপনার অস্তিত্ব ডিলিট করার  জন্য অবশ্যই আপনাকে এই অ্যাকাউন্ট গুলো মুছে ফেলতে হবে। কিন্তু এক এক করে কিভাবে এই অ্যাকাউন্ট গুলো মুছবেন? হতে পারে অর্ধেকের বেশি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে আপনি ভুলেই গেছেন অলরেডি, হতে পারে আপনি অনেক ওয়েবসাইটের নামই ভুলে গেছেন, যেখানে আপনার অ্যাকাউন্ট করা ছিল।

যাই হোক, অন্তত যদি আপনার ঐ অ্যাকাউন্ট গুলো মনে থাকে, তো প্রত্যেকটি সাইটে যান এবং ম্যানুয়ালি অ্যাকাউন্ট গুলোকে রিমুভ করে দিন। যদি কোন সাইটের অ্যাকাউন্ট রিমুভ করতে সমস্যা হয়, গুগল করুণ “How To Remove Account From SITENAME.COM” —সার্চ করার পরে আপনি অবশ্যই এমন কিছু নির্দেশনা পেয়ে যাবেন, যার মাধ্যমে ঐ সাইট’টি থেকে নিজের অ্যাকাউন্টকে ডিলিট করতে পারবেন।


অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার সার্ভিস
অনেক অনলাইন সার্ভিস রয়েছে যেমন ডিলিটমি —আপনার সকল ডাটা গুলোকে অনলাইন থেকে রিমুভ করতে আপনাকে সাহায্য করবে, এরা পেইড সার্ভিস প্রদান করে থাকে, যদি আপনার গোপনীয়তা সত্যিই অনেক মূল্য রাখে আপনার জন্য, তো আমি রেকোমেন্ড করবো এদের সার্ভিস গ্রহন করতে। তাছাড়া অনলাইনে আরো ফ্রী সার্ভিসও রয়েছে, যারা আপনার অনলাইন অস্তিত্ব মুছে দিতে আপনাকে সাহায্য করে। যেমন- ডিসীটমি —এখানে আপনার ইমেইল অ্যাকাউন্টের সাথে সাইটি’কে অথন্টিকেট করতে হবে, সাইট’টির ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ঐ মেইলের সাথে যুক্ত থাকা সকল অ্যাকাউন্ট গুলোকে খুঁজে বেড় করবে এবং আপনি চাইলে সেই অ্যাকাউন্ট গুলোকে ডিলিট করে ফেলতে পারবেন।
তবে এই ডিসীটমি ওয়েবসাইট’টি অনেকটা লিমিটেড, এখানে শুধু জিমেইল আর হটমেইল দ্বারা সাইনআপ করা সকল অনলাইন অ্যাকাউন্ট গুলো রিমুভ করা যায়। কিন্তু আপনি যদি ইয়াহু মেইল ব্যবহার করে কোন অ্যাকাউন্ট তৈরি করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে ঐ অ্যাকাউন্টে ম্যানুয়ালি প্রবেশ করে অ্যাকাউন্ট’টি ডিলিট করতে হবে।

পার্সোনাল তথ্য গুলো মুছে ফেলুন
বন্ধু হতে পারে, আপনি কোন সাইটে প্রবেশ করে সেখানে আপনার অনেক পার্সোনাল ইনফরমেশন শেয়ার করেছেন, হতে পারে আপনার পার্সোনাল ফোন নাম্বার, ন্যাশনাল আইডি নাম্বার, বার্থডেট ইত্যাদি। এখন ধরুন ওয়েবসাইট’টি ডাটা রিমুভ করার কোন অপশন রাখেনি, সেক্ষেত্রে আপনি গুগলের কাছে লিগ্যাল রিকোয়েস্ট সেন্ড করতে পারেন ডাটা গুলো রিমুভ করার জন্য। এই রিমুভাল প্রসেসে কিছুটা সময় লাগতে পারে, তাই আপনাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে, সাথে এতে যে আপনার ডাটা গুলো রিমুভ করায় হতে এতে কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে অ্যাটলিস্ট আপনার ট্রায় করে দেখা প্রয়োজন।

সার্চ রেজাল্ট থেকে নিজেকে মুছুন
এবার ধরুন আপনি সকল অনলাইন অ্যাকাউন্ট গুলোকে ডিলিট করে দিয়েছেন এবং সকল ওয়েবসাইটে পাবলিক ডাটা গুলোকেও ডিলিট করে দিয়েছেন। কিন্তু হতে পারে তারপরেও সেগুলো গুগল সার্চ রেজাল্টে এখনো শো করছে। গুগল অনেক ডাটা’কে অনেক ওয়েবপেজ’কে তাদের ক্যাশ সার্ভারে ক্যাশ করে রাখে। তাছাড়া সার্চ রেজাল্টের ডিস্ক্রিপশন থেকেও অনেক তথ্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব। পুরাতন সার্চ রেজাল্ট গুলোকে মুছে ফেলার জন্য সকল তথ্য গুলোকে আপনি এখানে পেয়ে যাবেন, আর বিং রেজাল্ট মুছে ফেলার জন্য এখানে দেখুন। এখানেও কোন নিশ্চয়তা নেই, যে গুগল আপনার ক্যাশকে মুছেই ফেলবে, কিন্তু অন্তত আপনার চেষ্টা করা প্রয়োজনীয়!


মেইল অ্যাড্রেস মুছুন
এবার সর্বশেষ স্টেপটি হচ্ছে আপনার মেইল অ্যাড্রেসটিকে ডিলিট করে দেওয়া। আপনি কোন প্রভাইডারের কাছ থেকে মেইল নিয়েছেন সেটার উপর নির্ভর করে আপনার মেইল অ্যাকাউন্ট ডিলিট প্রসেসটি আলাদা হতে পারে। আপনার অ্যাকাউন্ট সাইন ইন করে অ্যাকাউন্ট ডিলিট বা ডি-অ্যাক্টিভ করার অপশন খুঁজে বেড় করুণ। অথবা কিভাবে আপনার ইমেইল ডিলিট করবেন তার জন্য গুগল করে দেখতে পারেন। তবে হ্যাঁ, আগের স্টেপ গুলো সম্পূর্ণ শেষ করার আগে ইমেইল অ্যাড্রেস ডিলিট করবেন না। কেনোনা আলাদা অনলাইন অ্যাকাউন্ট গুলো ডিলিট করার সময় আপনার ইমেইল অ্যাড্রেসটি প্রয়োজনীয় হবে।

অনলাইন থেকে নিজের অস্তিত্ব ডিলিট করা সম্ভব আর উপরের স্টেপ গুলো এই কথাটি’কে প্রমানিত করে। তবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে স্টেপ গুলো অনুসরণ করতে হবে এবং মনে রাখবেন কিছু প্রসেসে কিছুটা সময় লাগতে পারে। আর হ্যাঁ, আরেকটি কথা, এটা আপনাকে মেনে নিতেই হবে কিছু কিছু জিনিষ কিছু কিছু জায়গা থেকে কখনোই ডিলিট করা সম্ভব নয়।

আপনি একবার ইন্টারনেটে আপনার তথ্য প্রবেশ করানোর পরে কখনোই ১০০% তথ্য বা তথ্যের সিঙ্গেল পিচ রিমুভ করতে সক্ষম হবেন না। তবে হ্যাঁ, অনেকখানি ডাটা রিমুভ করে ফেলা সম্ভব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনার জন্য উপকারি ছিল এবং আপনি সকল প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো সম্পর্কে জানলেন। যেকোনো প্রশ্ন বা সাহায্যের জন্য আমাকে নিচে কমেন্ট করতে পারেন।

ইমেজ ক্রেডিট; By : techubs.net/article/4255

গুগল ক্রোম থেকেও বেশি ফিচার রয়েছে যেগুলোতে তার মধ্যে সেরা ৫টি ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজার!

গুগল ক্রোম থেকেও বেশি ফিচার রয়েছে যেগুলোতে তার মধ্যে সেরা ৫টি ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজার!

ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান উন্নতির ফলে সত্যিই আমাদের দৈনন্দিন কম্পিউটিং চাহিদাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। আজকাল তো শুধু একটি ওয়েব ব্রাউজারের মধ্যেই সারাটাদিন আর সকল কম্পিউটিং চাহিদা গুলো মেটানো যায়। তাই ওয়েব ব্রাউজার গুলো দিন দিন আরোবেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম হিসেবে স্থান অধিকার করছে। যদি ওয়েব ব্রাউজার নিয়ে কথা বলা হয়, সেক্ষেত্রে মূলত তিনটি ব্রাউজারের নাম সবার আগে সামনে আসে; মোজিলা ফায়ারফক্স, গুগল ক্রোম, এবং ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার বা আজকের লেটেস্ট মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার। এছাড়া আরো অনেক ব্রাউজার রয়েছে যেগুলো আমরা ভুলেও ব্যবহার করে দেখি না। ক্রোম এবং ফায়ারফক্স উভয়েই ওপেন সোর্স সফটওয়্যার মানে আরো বহুত ব্রাউজার রয়েছে যেগুলো এই ক্রোম (ক্রোমিয়াম) আর ফায়ারফক্স ব্রাউজার প্রোজেক্টের উপরই নির্ভরশীল।


এই আর্টিকেলে ৫টি ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজার সম্পর্কে জানবো, যেগুলো গুগল ক্রোমের ফিচার বিদ্যমান থাকার সাথে সাথে আরো বেশি কিছু রয়েছে!

ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজার
যদি কথা বলি গুগল ক্রোম নিয়ে, এটি গুগলের ক্রোমিয়াম প্রোজেক্টের একটি প্রোগ্রাম, কিন্তু গুগল ক্রোম গুগল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তারা এতে প্রতিনিয়ত সব নতুন ফিচার যুক্ত করেই চলেছে। ক্রোমিয়াম একটি ওপেন সোর্স প্রোজেক্ট, যেটাকে কাজে লাগিয়ে যে কেউ আলাদা আলাদা ব্রাউজার তৈরি করতে পারে, সেখানে ইচ্ছা মতো নতুন ফিচার যুক্ত করাতে পারে। অপরদিকে গুগল ক্রোম হচ্ছে অফিশিয়াল গুগল ওয়েব ব্রাউজার, যেটাতে গুগল অনেক ফিচার যেমন- বিল্ডইন পিডিএফ রিডার, মিডিয়া কোডেক, স্বয়ংক্রিয় আপডেট ফিচার ইত্যাদি যুক্ত করে দিয়েছে। যেহেতু ক্রোম, ক্রোমিয়ামের উপর তৈরি তাই ক্রোমিয়ামের উপর তৈরি আরো আলাদা ব্রাউজারের সাথে ক্রোমের অনেক ফিচার মিলে যেতে পারে।

মডার্ন ওয়েব ব্রাউজার গুলোতে এক্সটেনশন সমর্থন করে, এর মানে ব্রাউজারের বিল্ডইন ফিচার ব্যাতিতও ইউজার যেকোনো এক্সটেনশন ইন্সটল করে নিজের ইচ্ছা মতো ফিচার পেতে পারে। বর্তমানে অনেক ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজার রয়েছে, যেগুলোতে অনেক সিকিউরিটি উন্নতি আনা হয়েছে এবং গোপনীয়তা রক্ষার খাতিরে গুগল সার্ভার লিঙ্ক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই আলাদা ব্রাউজার গুলো ক্রোমিয়ামের উপরই তৈরি কিন্তু এখানে আরো উপকারি এবং মজাদার অনেক ফিচার যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, যেমন- বিল্ডইন অ্যাড ব্লকার, বিল্ডইন ভিপিএন বা ডিএনএস ফিচার, বেটার টাব ডাউনলোড/বুকমার্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, আবার কোন কোন ব্রাউজারে ব্যবহৃত করা হয়েছে কুল থিম যেটা একই বিরক্তিকর লুক থেকে আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।

ক্রোমিয়াম বা বিলিঙ্ক ইঞ্জিন এর উপর তৈরি হওয়ার ফলে এই আলাদা ব্রাউজার গুলোতেও আপনি সরাসরি ক্রোম এক্সটেনশন মার্কেট থেকেই এক্সটেনশন ডাউনলোড এবং ইন্সটল করতে পাড়বেন। এর মানে ক্রোমের সকল এক্সটেনশন তো চালাতে পাড়ছেনই সাথে আলাদা আলাদা ব্রাউজার থেকে আলাদা আলাদা কুল ফিচার গুলোও পেয়ে যাবেন।

ভিভালডি (Vivaldi)
ভিভালডি একটি ফ্রীওয়্যার, এটি সম্পূর্ণ ক্রোমিয়াম প্রোজেক্টের উপর তৈরি। এই ক্রোস প্ল্যাটফর্ম ব্রাউজারটি ২০১৬ সালে প্রথম মার্কেটে সম্পূর্ণ ভার্সন রিলিজ করে, মানে আলাদা ব্রাউজার গুলো থেকে বয়সে এটি অনেক তরুণ ব্রাউজার। কিন্তু এর বয়সের কথা ভেবে এর ফিচারের যেন অবহেলা করবেন না, ক্রোমের মতোই এটি অনেক পাওয়ার ফুল এবং কুল লুকিং একটি ওয়েব ব্রাউজার। ব্রাউজারটির ইউজার ইন্টারফেসের উপর সরাসরি বেশ কিছু কাস্টমাইজেশন করতে পাড়বেন, এর থিম কালার পরিবর্তন করতে পাড়বেন এবং ব্রাউজারটি ওয়েব পেজের কালার অনুসারে ইউজার ইন্টারফেসের কালার থিম পরিবর্তন করতে পারে। এর সবচাইতে অসাধারন ফিচারটি হচ্ছে আপনি ট্যাব গ্রুপিং করতে পাড়বেন, সাথে আরো অনেক টাইপের ক্যাস্টম ফিচার তো থাকছেই। যেহেতু ব্রাউজারটি একেবারেই নতুন, তাই এখনো অনেক ফিচারের উপর কাজ করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে অবশ্যই আরো অনেক অসাধারণ ফিচার যুক্ত করা হতে পারে ব্রাউজারটিতে। আর এই অল্প সময়ের মধ্যেই ব্রাউজারটি বেশ জনপ্রিয়তা হাসিল করে নিয়েছে, আজকের অনেক টেক গীক আর অ্যাডভান্স ইউজারদের কাছে ভিভালডি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্রাউজার।

ব্রাউজারটি সত্যিই হাইলি কাস্টম যোগ্য একটি ব্রাউজার, এতে আপনি সহজেই স্পীড ডায়াল এবং স্টার্ট পেজ কাস্টম করতে পাড়বেন। কাস্টম থিম, কালার থিম, নাইট মুড ইত্যাদি ফিচার তো থাকছেই সাথে ব্রাউজারটি মাউস জেসচার সমর্থন করে। তাছাড়া ব্রাউজারটির মধ্যে বিল্ডইন সিএসএস ডিবাগার ফিচার রয়েছে, আর এর গুরুত্ব ওয়েব ডেভেলপার’রা ভালো করেই জানেন।


ইয়ানডেক্স ব্রাউজার (Yandex Browser)
ইয়ানডেক্স হলো রাশিয়ান ইন্টারনেট কোম্পানি, যাদের সার্চ ইঞ্জিন পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম। তাদের অফিশিয়াল ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজারটি দেখতে স্ট্যান্ডার্ড ব্রাউজারদের মতো না লাগলেও এতে যথেষ্ট ক্রোমিয়াম ফিল পেতে পাড়বেন। ২০১২ সালে ইয়ানডেক্স ব্রাউজার প্রথম মার্কেটে আসে, আর বর্তমানে এর ক্রোস প্ল্যাটফর্ম আর অনেক কুল ফিচার সহজেই অনেক ইউজারের মন কেড়ে নিয়েছে। উইন্ডোজ, ম্যাক, অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, লিনাক্স সকল প্ল্যাটফর্মের জন্যই এই ব্রাউজার প্রাপ্য। এই ব্রাউজারটির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বা বলতে পারেন ইউনিক ফিচারটি হচ্ছে ডিএনএস ক্রিপ্ট (DNSCrypt) — এর মানে এই ডিএনএস সার্ভার থেকে ডাটা সেন্ড বা রিসিভ করার সময় রিকোয়েস্ট গুলোকে এনক্রিপটেড করিয়ে তারপরে সেন্ড বা রিসিভ করে।


এই ব্রাউজারে নিউ ট্যাব বা স্টার্ট পেজকে ট্যাব্লেউ (Tableau) বলা হয়, এখানেও মাউস জেসচার রয়েছে কিন্তু ভিভালডির মতো আপনি একে কাস্টম করতে পাড়বেন না। সাথেও এটি ওয়েব সাইটের থিম এবং কালার অনুসারে নিজের থিম কালার পরিবর্তন করে। ওপেরা ব্রাউজারের মতো এতে টার্বো মুড রয়েছে, যেটা স্লো ইন্টারনেট কানেকশনে কমপ্রেশন ম্যাথড ইউজ করে ব্রাউজিং বা ভিডিও স্ট্রিমিং ফাস্ট করার চেষ্টা করে। সাথে আপনি যে ফাইলই ডাউনলোড করবেন, সেটা ক্যাস্পারস্কি অ্যান্টিভাইরাস দ্বারা স্ক্যান হয়ে ডাউনলোড হবে।


এপিক প্রাইভেসি ব্রাউজার (Epic Privacy Browser)
টেকহাবস আপনি নিয়মিত অনুসরণ করে থাকলে এই ব্যাপারটি অবশ্যই জানেন যে, আমি সিকিউরিটি আর প্রাইভেসির কতো বিশাল ফ্যান। যদিও এই ৩ নং পজিশনে অপেরা ব্রাউজারকে রাখলে ভুল হতো না, কিন্তু আলাদা বিল্ডইন প্রাইভেসি ফিচার যুক্ত থাকার জন্য আমি এপিক প্রাইভেসি ব্রাউজারকে আজকের লিস্টে ৩ নং এ রাখলাম। এটি ইন্ডিয়ার তৈরি প্রথম ওয়েব ব্রাউজার, যেটাতে একসাথে কতিপয় ইউজেট প্রি-ইন্সটল রয়েছে। এপিক ব্রাউজারটি বর্তমানে ম্যাক এবং পিসির জন্য, তবে আশা করা যায় সামনে হয়তো আরো অপারেটিং সিস্টেম সমর্থন করবে। ব্রাউজারটির ইন্টারফেস কিন্তু হুবহু গুগল ক্রোমের মতো, তবে ক্রোম ভেবে যেন ভুল করবেন না।

এপিক ব্রাউজারের প্রধান ফোকাস হচ্ছে প্রাইভেসির দিকে, আজকের সকল ব্রাউজার গুলোতে ইনকোগ্নিটো মুড রয়েছে, কিন্তু তারপরেও আপনার ব্রাউজিং তথ্য ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার বা সার্চ ইঞ্জিনের কাছে লুকায়িত নয়, তাই এই ব্রাউজারে বিল্ডইন ভিপিএন প্রক্সি রয়েছে। তাছাড়া ডিফল্ট ভাবে যখন আপনি ব্রাউজারটি ক্লোজ করে দেবেন, সাথে সেশন ডাটা যেমন কুকিজ, হিস্টোরি, ক্যাশ ইত্যাদি স্বয়ংক্রিয় পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর এতে বিল্ডইন ভিপিএন প্রক্সি ফিচার থাকার জন্য অবশ্যই আলাদা কোন এক্সটেনশন ব্যাবহার করার প্রয়োজন পড়বে না। তাছাড়া এসএসএল কানেকশন সর্বদা ডু নট ট্র্যাকিং হেডার রিকোয়েস্ট সেন্ড করে। আলাদা ক্রোমিয়াম ব্রাউজার গুলোতে অনেক টাইপের ডাটা ট্র্যাকিং চালু থাকে, এপিক ব্রাউজারে প্রাইভেসি রক্ষার্থে সকল লিঙ্ক রিমুভ করে দেওয়া হয়েছে, এতে ডাটা লিক অনেকটাই কমে যাবে।

ডাউনলোড এপিক প্রাইভেসি ব্রাউজার

অপেরা (Opera)
আমার প্রথম ইন্টারনেট ব্রাউজিং অপেরার হাত ধরেই হয়ে এসেছে, ২০০৭ সাল থেকে পিসিতে আর ২০০৯ সাল থেকে মোবাইলে অপেরা ব্যবহার করে আসছিলাম, তবে আমি এখন পার্সোনালভাবে অপেরা তেমন ব্যবহার না করলেও আমার কাছে সকল উপকারি ফিচারে প্যাকড বা জেটপ্যাক ব্রাউজার হচ্ছে এই অপেরা। ব্রাউজারটি ২০ বছরের বেশি পুরাতন আর পূর্বে এটি প্রেস্টো ইঞ্জিনের উপর কাজ করতো, যেটা পরিবর্তন করে ২০১৩ সালে বিলিঙ্ক ক্রোমিয়াম নির্ভর ইঞ্জিনের উপর অপেরাকে নতুন করে ডেভেলপ করা হয়। ওপেরাতে সত্যিই কিছু উপকারি আর বেস্ট ফিচার যুক্ত করা রয়েছে, ফলে একে সহজেই আপনার কম্পিউটারের জন্য অল-ইন-ওয়ান ব্রাউজার বললে ভুল হয়না।

ওপেরার স্টাইলিশ আর কুল লুকিং স্টার্ট পেজ বা স্পীড ডায়াল ইন্টারফেস সহজেই আপনার মনমুগ্ধ হতে বাধ্য। বর্তমানে অপেরার সবচাইতে আলোচিত ফিচারটি হচ্ছে এর বিল্ডইন ভিপিএন সার্ভিস, সেটা একেবারেই ট্রু ভিপিএন বা পেইড সার্ভিস গুলোর মতো সেবা প্রদান করে, আমি নিজেও ভিপিএন সুবিধার জন্য কম্পিউটারে একে ইন্সটল করে রেখেছি, আর সত্যি বলতে এই ভিপিএন মোটেও ইন্টারনেট স্পীড স্লো করে না। পূর্বে অপেরাতে ক্রোম এক্সটেনশন ব্যবহার করা যেতো না, কিন্তু এখন এটি ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজার হওয়াতে, এতে ক্রোম এক্সটেনশন ব্যবহার করতে পারবেন। এটি সরাসরি ক্রোম এক্সটেনশন স্টোর থেকে এক্সটেনশন ডাউনলোড বা ইন্সটল করতে পারেনা, আপনাকে অপেরা এক্সটেনশন ওয়েবসাইট থেকে এক্সটেনশন ডাউনলোড করতে হবে।
সাথে আরো কিছু হাইলাইটেড ফিচার যেমন- বিল্ডইন অ্যাড ব্লকার, ব্যাটারি সেভার মুড, টারবো পেজ লোডিং ফিচার, যেকোনো ওয়েব ভিডিও অপআউট করে ডেক্সটপ প্লেয়ারের মতো দেখতে পাড়বেন, এবং আরো বহু কাস্টম ফিচার রয়েছে, তাই আগ্রহী থাকলে আর কথা না বাড়িয়ে এক্ষুনি ইন্সটল করে দেখতে পারেন।

ডাউনলোড অপেরা ব্রাউজার

ইউসি ব্রাউজার (UC Browser)
মোবাইল প্ল্যাটফর্মে ইউসি ব্রাউজার সবচাইতে জনপ্রিয় একটি ব্রাউজার, আর ২০১৫ সাল থেকে আর ডেক্সটপ ভার্সনও রয়েছে। যতো ক্রোমিয়াম ব্রাউজার রয়েছে, তাদের তুলনায় এই ব্রাউজার দেখতে একটু ভিন্ন রকমের সাথে অনেক থিম ব্যবহার করতে পাড়বেন। অনেক থিম থাকলেও আমার কাছে ডিফল্ট থিমটিই বেস্ট বলে মনে হয়েছে। ব্রাউজারটিতে বেস্ট ফিচার হচ্ছে, এতে পোর্টেবল হটস্পট তৈরি করার সুবিধা রয়েছে, যদিও উইন্ডোজ ১০ এ ডিফল্টভাবেই ল্যাপটপ বা পিসি থেকে নেট শেয়ার করে ওয়াইফাই হটস্পট বানানো যায়, কিন্তু উইন্ডোজ ৭ বা ৮.১ এ ইউসি ব্রাউজারের এই সুবিধাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
এছাড়াও এই ব্রাউজারে অনেক উপকারি টুল রয়েছে, তবে আপনি যদি মোবাইল ভার্সন ইউসি চালিয়ে থাকেন, অবশ্যই জানেন এই ব্রাউজারের ডাউনলোড ফিচারটি অনেক পাওয়ারফুল, আর পিসির ক্ষেত্রেও সেটা সমান পাওয়ারফুল রেখেছে ইউসি ব্রাউজার, সত্যিই অনেক দ্রুত যেকোনো ফাইল ডাউনলোড করার ক্ষমতা রাখে এই ব্রাউজারটি। এতে ডিফল্ট স্ক্রীনশট টুল রয়েছে, যেটা অনেকের কাছেই উপকারি একটি ফিচার। ব্রাইটনেস অ্যাডজাস্টমেন্ট, নাইট মুড, লিঙ্ক প্রি-লোডিং, নেক্সট পেজ প্রি-লোডিং ইত্যাদি আরো অসংখ্য ফিচার রয়েছে এই ব্রাউজারটিতে। তাই অবশ্যই চেক করে দেখতে পারেন, তবে ইউসি ব্রাউজার ব্যবহার করার পূর্বে, উপরের লিস্টে থাকা ব্রাউজার গুলো আগে চেক করে দেখা প্রয়োজনীয়।

ডাউনলোড ইউসি ব্রাউজার

আরো অনেক ক্রোমিয়াম নির্ভর ব্রাউজার রয়েছে, যাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু ইউনিক ফিচার রয়েছে, তবে প্রত্যেক ব্রাউজারকে একটি সিঙ্গেল আর্টিকেলে যুক্ত করা সম্ভব নয়, ভবিষ্যতে আরো কিছু ক্রোমিয়াম ব্রাউজার নিয়ে আলোচনা করা যাবে, তবে এই লিস্টে বেস্ট কিছু ব্রাউজার নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আমাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন, এর মধ্যে কোন ব্রাউজারটি আপনি ব্যবহার করতে চলেছেন।

post by: techubs.net/article/6481

যেকোনো চার্জার যেকোনো ডিভাইজে ব্যবহার করা যাবে?

আজকের দিনে আমাদের সবার কাছে প্রায় একাধিক ডিভাইজ রয়েছে, অনেকেই একাধিক স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করেন আবার হয়তো ট্যাবলেটও ব্যবহার করেন। আমার নিজের কথায় বলি, একসাথে ৩টি স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হয়, কিন্তু যখন চার্জিং করার কথায় আসি, ব্যাপারটা একটু ঝামেলার হয়ে যায়। দেখা যায় সারাবাড়ির ওয়াল সকেট গুলো আমার স্মার্টফোনের চার্জারেই ভড়ে গেছে। আমি জানি, এই প্রবলেম শুধু আমি একা নয়, অনেকেই ফেস করেন। আচ্ছা, যদি আমি আবার হুয়াওয়ে ফোনের চার্জার দিয়ে শাওমি বা স্যামসাং ফোন চার্জ করি তাহলে কি কোন সমস্যা হবে? আবার আমার ফোনের চার্জার দিয়ে কি ট্যাবলেট চার্জ করতে পারবো? বা ট্যাবলেটের চার্জার দিয়ে ফোন? — এই আর্টিকেলে এই প্রশ্ন গুলোরই উত্তর দিতে চলেছি।

চার্জার টাইপ
আজকের দিনে শুধু স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট নয়, অনেক পোর্টেবল ডিভাইজ ব্যবহার করতে হয়, এবং প্রত্যেকটি ডিভাইজকে চার্জ করার প্রয়োজন থাকে। এখন আপনি যদি একাধিক ডিভাইজ ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে একাধিক চার্জার বহন করা খুবই ঝামেলার কাজ হতে পারে। আর সকল ডিভাইজের চার্জার টাইপও কিন্তু এক রকমের হয় না। হতে পারে আপনার স্মার্টফোন আর ট্যাবলেট উভয়তেই মাইক্রো ইউএসবি চার্জার পোর্ট সাপোর্ট করে, তাহলেই কি সবকিছু মিল হয়ে গেলো?

আবার যদি কথা বলি, ল্যাপটপ চার্জার নিয়ে, অবশ্যই দেখে থাকবেন ল্যাপটপের জন্য কোন স্ট্যান্ডার্ড চার্জার নেই। একেক ল্যাপটপ তাদের একেক টাইপের চার্জার এবং পিন ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে স্মার্টফোন চার্জার দিয়ে ল্যাপটপ চার্জ করার চিন্তা সম্পূর্ণই বৃথা। তবে বর্তমানের ল্যাপটপ গুলোতে ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট দেখা যাচ্ছে, এতে ল্যাপটপ চার্জার গুলো হয়তো ভবিষ্যতে ইউনিভার্সাল হয়ে উঠবে। অ্যাপেল ডিভাইজ গুলো ব্যবহার করলে আরেক সমস্যা, সেখানে লাইটনিং পোর্ট ব্যবহার করা হয়, শুধু অ্যাপেলই এই টাইপ কানেক্টর ব্যবহার করে, তবে আইফোন আর আইপ্যাড একসাথে ব্যবহার করলে একই চার্জার টাইপ দেখেতে পাবেন।

এবার কথা বলি, মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট নিয়ে, বর্তমানে এটি সবচাইতে ইউনিভার্সাল। বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ফোন, উইন্ডোজ ফোন, ব্ল্যাকবেরি ফোন, স্মার্ট ওয়াচ ইত্যাদি সহ অনেক পোর্টেবল ডিভাইজে মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট ব্যবহার করা হয়। যাই হোক, অ্যাপেল লাইটনিং টু মাইক্রো ইউএসবি অ্যাডাপটার অফার করে থাকে। যদি কথা বলি ইউএসবি টাইপ-সি নিয়ে, এটি নতুন কানেক্টর টাইপ এবং হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে ইউনিভার্সাল হয়ে উঠবে। এই টাইপের কানেক্টর স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ল্যাপটপ গুলোতেও ব্যবহার হতে দেখা যাচ্ছে, কেনোনা ইউএসবি টাইপ-সি অনেক বেশি পাওয়ার হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রাখে। ল্যাপটপে মাইক্রো ইউএসবি কানেক্টর থাকে না, কেনোনা এটি ল্যাপটপকে যথেষ্ট পাওয়া সরবরাহ করতে সক্ষম নয়।

যাই হোক, এখন ফিরে আসি মূল বক্তব্যে; দেখুন, উত্তর একেবারেই সাধারণ! আপনি যেকোনো চার্জার যেকোনো ডিভাইজে ব্যবহার করতে পাড়বেন? — হ্যাঁ, আপনি পাড়বেন কিন্তু তার আগে অবশ্যই আপনার চার্জার টাইপ মিল হতে হবে। যদি দুইটি ডিভাইজের সেইম চার্জার কানেক্টর হয়ে থাকে, কোনই সমস্যা নেই, আপনি ব্যবহার করতে পাড়বেন। কিন্তু কিছু বিষয় আপনার মাথায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আপনি যদি স্যামসাং এর অফিশিয়াল চার্জার ব্যবহার করে হুয়াওয়ে ডিভাইজ চার্জ করেন, এতে কোন সমস্যা হবে না বা আপনি যেকোনো হাই কোয়ালিটি ভালো ব্র্যান্ডের তৃতীয়পক্ষ চার্জারও ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু সস্তা চাইনিজ চার্জার গুলো থেকে সাবধান থাকবেন, ৫০-১০০ টাকার চার্জার গুলো ভুলেও ব্যবহার করবেন না, এগুলো আপনার ডিভাইজকে ড্যামেজ করতে পারে। আপনি অবশ্যই তৃতীয়পক্ষ কোম্পানির চার্জার ব্যবহার করতে পাড়বেন, তবে আপনাকে সিউর হতে হবে চার্জারটি যেন হাই কোয়ালিটির হয়।

ভোল্টেজ এবং অ্যাম্পারেজ
চার্জার কানেক্টরের ঝামেলা মেটার পরে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ টার্মটি হচ্ছে ভোল্টেজ এবং অ্যাম্পারেজ। দেখুন, যতো মাইক্রো ইউএসবি চার্জার রয়েছে সবগুলোই ৫ ভোল্টের হয়ে থাকে, এর মানে ভোল্টেজ নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। বাজারে দুই টাইপের চার্জার সবচাইতে বেশি দেখা যায়, ৫ ভোল্ট এবং ১ অ্যাম্পারেজ ও ৫ ভোল্ট এবং ২.১ অ্যাম্পারেজ। ভোল্টেজ হলো কোন পাইপে প্রবাহিত হওয়া পানির প্রেসার আর অ্যাম্পারেজ হলো পাইপের মধ্যদিয়ে কতোটা পানি বহমান হবে তার পরিমাপ, আপনি অ্যাম্পারেজকে কোন নদীর পানির স্পীডের সাথেও তুলনা করতে পারেন। যদি আপনি ডিভাইজে বেশি ভোল্টেজের চার্জার ব্যবহার করেন, তবে এতে ডিভাইজের সার্কিট ড্যামেজ হয়ে যাবে, কেনোনা বেশি এনার্জি লোড নেবার ক্ষমতা ঐ ডিভাইজটিতে নেই। তবে মাইক্রো ইউএসবি চার্জারের ক্ষেত্রে বেশি ভোল্টেজ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না, কেনোনা সকল চার্জার ৫ ভোল্টের উপরই হয়ে থাকে, এমনকি আপনি যদি ল্যাপটপ থেকেও চার্জ করেন, সেখানেও ৫ ভোল্টই সরবরাহ বলে ইউসবি ক্যাবলে।

কিন্তু প্রশ্ন আসে, অ্যাম্পারেজের ক্ষেত্রে, কেনোনা বিভিন্ন চার্জার আলাদা আলাদা অ্যাম্পারেজে রেটিং থাকতে পারে। আপনার এক ফোনের চার্জারে ১ অ্যাম্পারেজ রেটিং থাকতে পারে, সাথে ট্যাবলেট চার্জার ২.১ অ্যাম্পারেজ রেটিং করা থাকতে পারে, তো এক্ষেত্রে কি ট্যাবলেট চার্জার স্মার্টফোনে ব্যবহার করা ঠিক হবে? দেখুন, অ্যাম্পারেজের ফলে আপনার ফোনটি ব্লাস্ট হয়ে যাবে না। আজকের বেশিরভাগ মডার্ন ফোন অনেক দ্রুত চার্জ হতে পারে, এর মানে ফোনে বেশি অ্যাম্পারেজ সাপোর্ট করার ক্ষমতা থাকে। আপনি ২.১ অ্যাম্পারেজ রেটিং করা ফোনে যদি ১ অ্যাম্পারেজ চার্জার ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে কিছুই হবে না, তবে চার্জিং হতে দেরি লেগে যাবে। আবার ১ অ্যাম্পারেজ রেটিং করা ফোনে ২.১ অ্যাম্পারেজ ব্যবহার করলেও সমস্যা হবে না, বরং চার্জিং টাইম একটু ফাস্ট হয়ে যাবে। বেশি অ্যাম্পারেজ চার্জার ব্যবহার করলেও আপনার ফোনে সমস্যা হবে না, কেনোনা ফোন ব্যাটারি সার্কিটে আগে থেকেই অ্যাম্পারেজ ম্যানেজ করার ক্ষমতা দেওয়া থাকে। আবার আপনি যদি হাই কোয়ালিটি চার্জার কিনে থাকেন, সেক্ষেত্রে চার্জার নিজেও অনেক স্মার্ট হবে, সে পরিমান মতোই ডিভাইজকে চার্জ সরবরাহ করবে। আপনার চার্জার যদি ১ অ্যাম্পারেজ রেটিং হয়, তো আজকের দিনে এটিকে স্লো চার্জার বলা হবে, কেনোনা আজকের স্মার্টফোন গুলো অনেক দ্রুত চার্জ হতে পারে সাথে বেশি অ্যাম্পারেজ হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রাখে।

বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করার জন্য কুইক চার্জিং টেকনোলজির উদাহরণ নেওয়া যেতে পারে। আজকের অনেক মডার্ন ডিভাইজ কুইক চার্জিং সাপোর্ট করে, কিন্তু কুইক চার্জিং ঠিক তখনোই করতে পাড়বেন, যখন আপনার ডিভাইজ এবং চার্জার উভয়েই সেটা সমর্থন করবে। আবার কুইক চার্জিং টেকনোলজি কিন্তু আলাদা হতে পারে, যদি ডিভাইজের টেকনোলজির সাথে চার্জার কুইক চার্জিং টেকনোলজি ম্যাচ না করে, তাহলে কিন্তু কুইক চার্জ হবে না, কিন্তু এর মানে এটা নয় কোন চার্জই হবে না, চার্জ হবে তবে স্লো চার্জ। আপনি কুইক চার্জিং সাপোর্ট করেনা এমন ডিভাইজে কুইক চার্জার লাগালে সেখানে চার্জ হবে, কিন্তু রেগুলার স্পীডে, তাহলে কি দাঁড়ালো? — অবশ্যই আপনার ফোনে বেশি অ্যাম্পারেজ ব্যবহার করতে পাড়বেন, তবে ভোল্টেজ বেশি হলে সার্কিট ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।

তাহলে কি যেকোনো চার্জার ব্যবহার করা যাবে?
ওয়েল, আমি উপরের প্যারাগ্রাফ গুলোতে বিষয়টি পরিষ্কারই করে দিয়েছি। হ্যাঁ, বেশিরভাগ সময়ই আপনি ব্যবহার করতে পাড়বেন। তবে আপনার ডিভাইজের আসল চার্জার যদি ২.১ অ্যাম্পারেজের হয়ে থাকে আর আপনি যদি ১ অ্যাম্পারেজ আলাদা চার্জার ব্যবহার করে চার্জ করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার চার্জিং স্পীড স্লো হয়ে যাবে। আবার আপনার ডিভাজের আসল চার্জার ১ অ্যাম্পারেজ, এর মানে কিন্তু এই নয় এটি বেশি অ্যাম্পারেজ চার্জার সমর্থন করতে পাড়বে না।

ইউএসবি টাইপ-সির ক্ষেত্রে বিষয়টি অনেক সহজ, আপনি একই চার্জার ব্যবহার করে ইউএসবি টাইপ-সি সাপোর্ট করা সকল ডিভাইজ চার্জ করতে পাড়বেন, এতে সমস্যা হবে না, হোক সেটা ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, বা ট্যাবলেট। ভালো মানের চার্জার ব্যবহার করলে, চার্জার এবং স্মার্টফোন ব্যাটারি নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিতে পারে, এতে ব্যাটারির যেরকম চার্জ দরকার, চার্জার সেটা সরবরাহ করতে পারে। তাই অবশ্যই কমদামী চার্জার পরিত্যাগ করায় বেটার।

আমি নিজেও এক চার্জার ব্যবহার করে আমার দুইটি আলাদা ব্যান্ডের স্মার্টফোন এবং উইন্ডোজ ফোন চার্জ করি। আমার উইন্ডোজ ফোনের আসল চার্জার ১ অ্যাম্পারেজে রেটিং করা কিন্তু আমি ২.১ অ্যাম্পারেজ চার্জার ব্যবহার করে চার্জ করছি ১ বছর যাবত, এতে কোনই সমস্যা লক্ষ্য করতে পারি নি, বরং একটু চার্জ দ্রুতই হয় এখন। আশা করছি, আর্টিকেলটি থেকে সকল প্রশ্ন গুলোর সঠিক উত্তর পেয়ে গেছেন।

পোস্ট ক্রেডিটঃ By techubs.net

ফটোশপ টিটোরিয়াল। Valentine's Day Photo Editing Tutorial



আজকের টিউটোরিয়ালের বিষয়ঃ সামনে বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে রোমান্টিক ম্যানোপুলেশন টিটোরিয়াল শিখাব। আশা করি ভাল কিছু শিক্ষতে পারবেন।


আমার চ্যানেলটি Subscribe করুন 






১০০০+ লাইক নিয়ে নিন আপনার ফেসবুক একাউন্টে একদম ফ্রি.


ফেসবুকে অটো লাইক এর নাম সুনেন নাই এমনটা খুব কম । অনেকেই বিজ্ঞাপন দেয় বিভিন্ন গ্রুপে, এই লিংকে যান লাইক বৃদ্ধি করুন । এসব ভিত্তিহিন এবং ম্যালওয়্যার যা আপনার ফেসবুক এবং আপনার কম্পুতার এর তথ্য চুরি করে এবং আপনার সর্বনাশ করে ।  প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে কিভাবে অন্যরা লাইক নেয়? 
আমরা করেছি নিরাপদ সার্ভার, যেটা সম্পুরন সেফ এবং নিরাপদ (১০০% গারানটেড) একটা সাইট
চলুন দেখে নিই কিভাবে ১০০০+ লাইক নিবেন

ফটোশপ টিটোরিয়াল False Color Effect In Photoshop




আজকের টিটোরিয়াল: আজকের টিটোরিয়ালের মাধ্যমে শিক্ষতে পারবেন কিভাবে হলিউডের মডেলের ছবিতে  False Color Effect দিতে হয়। এই ইফেক্টটি আমাদের দেশে জনপ্রিয় না, কিন্তু বাইরের দেশে এই ইফেক্টটির ব্যবহার বেশি দেখা যায়।